Wednesday, April 20, 2022

দিশারী



আমার আবার দিক্ভ্রমের বাতিক আছে। 


এই  একটি কারণেই আমি গাড়ী ড্রাইভ করি না বললে ভুল হবে তবে এটা  অনেক গুলো কারণের  মধ্যে একটা ।  যেহেতু  আমার  চলন্ত যেকোনো বাহনে একাগ্রতার অভাব হয় সেহেতু দিক ভুল করা ও যে অসম্ভব নয় তাও নিশ্চিত। এই অদ্ভুত ব্যারামে অনেক ভোগান্তি আমার হয়েছে। কিছু কিছু ঘটনা বলি - 

বাড়ীর কাছের গলিতে ভুল করে ঢুকে পড়ে  ঘুরপাক খেয়েছি বহুবার।  বহুত রাস্তা ভুল করেছি। গলত  টার্ন নিয়েছি। আপনজনদের হাঁসি ঠাট্টার খোরাক হয়েছি।

একবার অটোতে বসে ডান  দিক বলতে বাঁ দিক বলে ফেলেছিলাম। অটো চালক রাগতঃ স্বরে  আমায় নিজের ডান  দিক  বাঁ  দিক ঠিক করে নিয়ে তারপর তাকে ডাইরেকশন দিতে  বলেছিল ।

 একবার রিক্সা করে বাড়ী ফিরছি হঠাৎ মাথাটা গড়বড় করে বসলো। তখন আমি পশ্চিম বিহারে থাকি। এই এলাকার সবচেয়ে বড়  মার্কেট জোয়ালাহেড়ী  থেকে সোজা নাক বরাবর গেলেই জী -এচ ১৪ ব্লকে  আমার বাসা ... কিন্তু কেন জানিনা সব গুবলেট হয়ে গেলো। তখন ভর  দুপুর। রিকশাওয়ালাকে খুব ঘাবড়ে গিয়ে বললাম ভাই আমার বাড়ীটা তো এখানেই ছিল।  কোথায় চলে  গেলো জানিনা। বিহারী রিকশাচালক রসিক ছিল, বললে "সারা দিন পড়ে আছে, খুঁজে নিন। " ভাব ..

তবে তৃতীয় ঘটনাটি মারাত্মক হয়েছিল। ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ নিয়ে রাস্তায় নেমে ছাই রঙা ওয়াগন আর  দেখে দরজা খুলে ড্রাইভারের পাশের  সিটে  বসেই  হুকুম দিলাম, "চল "...গাড়ী স্টার্ট দিচ্ছে না দেখে পাশে তাকিয়ে  দেখি একটি গোল পানা অচেনা মুখ -  শ্যামল বরণ , একজোড়া হৃষ্টপুষ্ট গোঁফ আর বড় বড় বিস্ফারিত  চোখ।  বিস্ফারিত বলবো না -  বিস্মিত  , অভিভূত , রোমাঞ্চিত - সব কিছু মেলানো সেই  লোম খাঁড়া করা দৃষ্টি  কী বলবো আর !!  আমি সেকেন্ডের মধ্যে বাইরে।   

আর একটি ছাই রঙা ওয়াগন আর পিছনে দাঁড়ানো দেখে বুঝলাম কোথায় গন্ডগোলটা করেছি। এর পর থেকে নিজের গাড়ীতে বসার আগে গাড়ীর  নম্বর চেক করার  অভ্যাস করেছি। কিন্তু নম্বরেও যদি গোল করি তাহলে আর কী কী পন্থা আছে এই ব্যারাম থেকে মুক্তি পাওয়ার ভাবতে হবে..

হ্যাঁ ..আরেকটা  কথা 

যেই অচেনা ভদ্রলোকের গাড়ীতে বসে পরম আত্ম-বিশ্বাসের সঙ্গে গাড়ী চালানোর হুকুম দিয়েছিলাম তাঁর স্ত্রী গাড়ীর  কাছাকাছি ছিলেন কিনা জানিনা। একজন আজনবি মহিলাকে গাড়ীতে বসে কিছুক্ষন পরে ছিটকে বেরিয়ে আসতে দেখে তাঁদের বৈবাহিক জীবনে পরবর্তীকালে কোনো গোলযোগ বেঁধেছিলো  কিনা  সেটা জানার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও জানবার কোনো সুযোগ বা উপায় হয়নি । 

হবে কী করে ? ভদ্রলোককে আরেকবার পথে-বিপথে দেখে চিনতেই পারবো না।  তবে হ্যাঁ। .ওনার সেই অবিশ্বাস্য ভরা কেতো -কেতো  চাহনি জীবনে ভুলবো না....... ... সেটা ঠীক।  

No comments:

Post a Comment