Friday, December 28, 2012

ভৌতিক (ভুমিকা)


গরমের ছুটি পড়ে গেছে। স্কুল বন্ধ। মনে আনন্দ তো আছেই কিন্তু তাঁর সঙ্গে এক রকমের  উত্তেজনা ও রয়েছে বইকি । কী করব ? দু মাসের লম্বা ছুটি – কী-কী করে কাটাব, কোথায়-কোথায় বেড়াতে যাব, কোন-কোন বন্ধুর সঙ্গে জটলা বেঁধে আড্ডা মারব, তাঁর একটা লিস্টি বানাব-বানাব ভাবছি এমন সময় দিদির হঠাৎ কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আর গলা ব্যথা শুরু হল। দেখতে-দেখতে  দু  গালের  নিচের দিকে কান দুটো ঘেষে গলার কিছু অংশ ফুনকো লুচির মতন ফুলে ঢোল হয়ে গেল !আমি হেঁসে ভেংচি কাটি , "গাল ফোলা  গোবিন্দের মা "!!!  
 মা মাথায় হাত দিয়ে বললেন, “গেল যা,  সব প্ল্যান ভেস্তে”।

“কী প্ল্যান”? আমি উৎসুক কন্ঠে জিজ্ঞাসা করি।

“কলকাতা যাবার”। মা জানান।

“কবে হল এই প্ল্যান”? আমি শুকনো মুখে শুধোই।

“এই কিছু দিন আগে। ভেবেছিলাম তোকে সার্প্রাইজ দেব। তা আর হল না। তোর দিদি আবার মাম্পস্ বাঁধিয়ে বসল। এখন থাক বন্দি হয়ে ঘরের মধ্যে এক মাস”।

মার রাগ হওয়া স্বাভাবিক। সতেরো বছর পরে কলকাতা যাওয়ার প্ল্যানটা এমনি ভাবে মাটি হয়ে যাবে ভাবা যায়নি।  

বাবু বললেন “আরে! শেলীর ওপরে রাগ করে কী হবে? ও কী ইচ্ছে করে রোগ বাঁধিয়েছে? এ তো ভীষণ ছোঁয়াচে। হাওয়ায় জীবাণূ ভাসছে। কখন কাকে আক্রমণ করবে কোনো খবর আছে”।

ব্যানার্জী কাকু, বাবুর বন্ধু, মাকে আরো ভাবিয়ে তুললেন, “ বৌদি, সাবধান! শেলীর যখন হয়েছে তখন মিঠুর হতে বাধ্য। আপনি বরঞ্চ মিঠুকে কলকাতা  পাঠিয়ে দিন। এখানে এক ঘরে শোওয়া-বসা, পড়া-খেলা। নো! নো! ভীষণ রিস্ক, বুঝলেন, জহর দা”।

বাবা বলেন, “তাই তো। কথাটা মন্দ বলেননি, ব্যানার্জী বাবু”।

আমি আঁতকে উঠি, “একা! কলকাতা” ?

মা ও ইতস্তত করেন, “ ওকে না হয় অন্য ঘরে রাখব...”

কথা না শেষ হতেই, ব্যানার্জী কাকু হাঁ-হাঁ করে ওঠেন, “ এক ঘর, এক বাড়ি, সব সমান। দু জনেই বিছানা নিলে আপনি কী করে একা দুটি পেশেন্ট সামলাবেন, বলুন তো”?

কথাটা যুক্তিযুক্ত মনে হলেও মা বললেন, “ কার সঙ্গে যাবে ও ? একলা আমি মোটেও ছাড়ছি না”।

“একা কেন? আমি তো আছি”। ব্যানার্জী কাকু আশ্বাস দেন।

প্রতি বছরের মতন এই বছর ও কাকু দু-তিন মাসের জন্য কলকাতা পাড়ি দিচ্ছেন, জানালেন এবং ওনার বোরিং, একক যাত্রা ইন্টারেস্টিং করতে এবার সঙ্গে থাকব আমি। হাওড়ায় ছোটকা আমায় রিসিভ করে নেবেন – সমস্যার সমাধান মুহূর্তের মধ্যে করে ফেললেন ব্যানার্জী কাকু।

আমি অবশ্য মাঝে নাকি সুর ধরেছিলাম, “ মা, আমি কলকাতায় কাউকে চিনিনা...”

মা মাঝ পথেই থামিয়ে দিলেন, “ চিনি না মানে ? কাকু, পিসী, পিসেমশাই, মাসি-মেসো, দিদি-দাদারা, সবাই তো আছেন। গেলেই ভালো লাগবে, দেখবি”।

কথা হচ্ছিল বৈঠকখানা ঘরে বসে। পাশেই আমাদের শোবার ঘর। এখন অবশ্য সেই ঘরের দিদিই একচ্ছত্র অধিপতি, থুড়ি, অধিপত্নি। পাশাপাশি ঘরের কথাবার্তা পরিষ্কার শোনা যায়। রাতের খাওয়া শেষে মার ঘরের দিকে যেতে গিয়ে দিদিকে দরজার এদিকে দাঁড়িয়ে গুড নাইট বলতেই  আমাকে দিদি ইশারায় ভিতরে আসতে বলে। আমি বলি, “ঘরে ঢুকতে যে মানা”। “দূর ভীতু, তোর দ্বারা আর কিসস্যু হবে না”। মানে লাগল, এগিয়ে গেলাম, “কী বল”।

দিদি ফিসফিসিয়ে বলে, “ব্যানার্জী কাকু তোকে সঙ্গে নিয়ে কেন যেতে চাইছেন বল তো”?

আমি বলি, “কেন, তোর অসুখ তাই”।

দি বলে, “দূর্ বোকা! অত খানি পথ ! জানিস কত? ১৪৫০ কিলোমিটার,  দিল্লী থেকে হাওড়া... সারা পথ তোকে ওঁর যত রাজ্যের আজগুবি গপ্পো শুনতে হবে,  বলে দিলুম। আর তো কেউ শোনানোর নেই তাই তোকেই গপ্পোগুলো গেলাবেন । খবরদার! বলে দিলুম, একটা ও বিশ্বেস করিস্ নে যেন। তুই তো বোকা। ভাববি বুঝি সবই সত্যি। ”  

ব্যানার্জী কাকুর এই বড় দোষ এবং গুন ও বটে। দারুন রসিয়ে-রসিয়ে গল্প করতে পারেন। যখন গপ্পো ফাঁদেন তখন শুনতে-শুনতে তাক লেগে যায়। তবে পরে অনেকবার মাকে বলতে শুনেছি যে বেশীর ভাগটাই ওনার কল্পনা-জগতের সৄষ্টি – অনেক খানিই অতিরঞ্জিত।  

মাথা নেড়ে তাই বলি, না  সবটা যে সত্যি নয় সেটা মনে রাখার চেষ্টা করব। আমি আবার গল্পের পোকা। সত্যি আর কাল্পনিকের মধ্যে যে একটা সুক্ষ্ম বিভেদ আছে সেটা মাঝে-মাঝে ভুলে যাই।


 

রাত্রে ঘুমিয়ে-ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখি রাজধানি ট্রেন রাতের অন্ধকারে সাঁ-সাঁ করে রেল লাইনের উপর দিয়ে ছুটে চলেছে। কম্পার্টমেন্টের মধ্যে আমি আর ব্যানার্জী কাকু শুধু জাগা। ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে কিন্তু ব্যানার্জী কাকুর গল্প আর শেষ হচ্ছে না। যত বলি কাকু এবার শুতে যাই, কাকু মাথা নেড়ে বলেন, আরে খুকি আরেকটু শোনো না তারপর কী হ’ল। ওমনি দিদি কোথা থেকে চলে এসে চোখ পাকিয়ে আমায় শাসায়, “ তোকে আগেই বলেছি না, একদম বিশ্বাস করবি না, হাঁদা কোথাকার”। আর আমি সজোরে মাথা নেড়ে বলি, না! না! করিনি, করিনি বিশ্বাস।

মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে দেখি গা ঘেমে নেয়ে এক সা, পাখা বন্ধ, লোড শেডিং...

 


মধ্য রাতের স্বপ্ন কী সত্যি হয়? ব্যানার্জী কাকুর টুন্ডলার জঙ্গলে বাঘের পাশে বসে গরম-গরম জিলিপি খাওয়ার গল্প শুনতে-শুনতে তাই ভাবছিলাম। ঠান্ডা-ঠান্ডা লাগছিল। কাকু টিটিকে বলে এসিটা কমানোর অনুরোধ করলেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই কী সন্দেহ হওয়াতে আমার কপালে হাত রেখেই আঁতকে উঠলেন, “ খাইসে! তোমার তো দেখছি গা পুড়ে যাচ্ছে”। গলাটাও খুসখুস করছিল আর ঢোক গিলতে ও কষ্ট হচ্ছিল। কাকুকে বলাতে উনি মাথায় হাথ দিয়ে আফসোস করতে লাগলেন, “ ইস্! যার থেকে বাঁচাবো ভাবলাম, তাই জাপটে ধরল। কথায় আছে না, তুমি যাও বঙ্গে আর তোমার ভাগ্য যায় সঙ্গে। এক্কেবারে মোক্ষম  ফললে, দেখেছ”। আমার তখন আর দেখার অবস্থা ছিল না। হাওড়া পৌঁছে ছোটকার হাথ ধরে কী করে বড় পিসীর বাড়ী এলাম জানা নেই।

যদি হুঁস থাকত তাহলে হয়তো পূর্বেই কিছুটা আন্দাজ করতে পারতাম যে এ বাড়ী যে-সে বাড়ী নয়। এখন রাত পৌনে বারোটা। আর লিখব না। লেখা মানেই পুরোনো স্মৄতি জিইয়ে ওঠা। নিশুতি রাতের নিঃস্তব্ধ আঁধারে সে সব শুপ্ত স্মৄতির ঘুম নাই বা ভাঙ্গালাম।

এখানেই এবার ইতি টানলাম...

বিদায়...

Saturday, December 22, 2012

অনেক দিন পর নিজেকে ফিরে পেলাম


ল্যাপটপটা ক্র্যাশ করে যাওয়াতে জগত থেকে বিচ্যুত, অন-লাইন বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে পারছিলাম না। মন হাকুপাকু করছিল। যাইহোক, ল্যাপটপটা তো ঠীক হতে লাগল প্রায় হপতা খানেক কিন্তু সমস্যা দাঁড়াল মাইক্রোসফ্ট(২০১০) অফিস নিয়ে। আমার আগের ভার্সানটা ছিল ট্রায়াল ভার্সান। হার্ড ডিস্কটা বদলাতে গিয়ে দেখা গেল মাইক্রোসফ্ট আবার ইন্সটল করতে হবে। আমি আবার অত কম্পিয়ুটার সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল নই। আমার কম্পিয়ুটারে সব রকম ডাউনলোড আমার বোনপো করে থাকে। তাঁকে আবার পাওয়া মুশকিল – সে এখন বেঙ্গালোরে।

সব রকম প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে শেষ-মেষ গত সপ্তাহে ল্যাপটপটা চালু অবস্থায় এসেছে। আজ অভ্র কীবোর্ডটা ডাউনলোড করে ফেললাম। এখন সোয়াস্থি।

আজ আমার জন্মদিন।

জন্মদিনে নিজেকে এই উপহার দিলাম – ঘরে ফিরে আসার।

এখন চুটিয়ে গল্প করা যাবে কেমন?