"Vanderloost -Speak Your Heart Out" is a vagrant and bizarre conglomerate of consequential and inconsequential moments, transient and stagnant thoughts, fickle and rigid perceptions, forgettable and not so forgettable anecdotes and experiences, day to day trivia, cornucopia of hard hitting realities and pristine imageries and most importantly people whom I think I know , whom I'd like to know and whom I do not want to know.
Sunday, May 28, 2023
অবিনাশ বাবুর হবি
Tuesday, May 23, 2023
রহস্য ! কেমন?
Wednesday, March 29, 2023
রাম রাম
Friday, March 10, 2023
ট্যারো
এই ছোটো গল্পটি স্টোরি মিরর ডট কমে ও পাঠক পাঠিকারা পড়তে পারেন
রিটায়ার করার আগে থেকেই মাথায় অনেক রকম খেয়াল পাকনা মেরে উড়ছিল। খেয়াল মানে যাকে ইংরেজিতে বলে ফ্যান্সিফুল থটস। কী করে সময় কাটানো যায়। অফিসের কলিগ ও বন্ধুরা নানান আইডিয়া চাপালো -
"তোর তো লেখার খুব শখ। বই-টই ছাপিয়ে ফ্যাল " - যেন কত সোজা।
"আমাদের দেশে কত কিছু আছে দ্যাখার - ঘুরতে যা " - মাগো! আমি চিরকালের ঘরকুনো আমাকে ঘুরতে যেতে বলে ?
"বই পড় " - পড়ি ..আর কত পড়বো !
"কিছু শেখ " - যেমন ?
"কোনো এন জি ও জয়েন কর" - ঠিকানা দে .. চুপ।
শেষমেষ ট্যারোতে আটকালাম। বাবাকে জ্যোতিষ শাস্ত্র চর্চা করতে দেখেছি। আমাদের বাড়িতে এস্ট্রোলজিক্যাল ম্যাগাজিন প্রতি মাসে আসত । বাবা পড়তেন। সেকালের জ্যোতিষী মানে একখানা চটি বই যার মধ্যে লগারিদমের মতন কী সব ছাই ভস্ম নাম্বারের মতন লেখা তা দেখে পাতার পর পাতা অংক কষা - অক্ষাংশ .. দ্রাঘিমাংশ ..জন্ম তারিখ ..ক্ষণ.. জন্মকালে গ্রহের অবস্থান .. জন্ম স্থান.. আরও কত কি । তারপর গম্ভীর মুখে কোন গ্রহ কোথায় বর্তমানে অবস্থিত তা নিয়ে বুঝিয়েদের সঙ্গে আলোচনা করা। যার ঠিকুজি তাকে বেশ কিছু দিন অপেক্ষা করতে হতো ভবিষ্যৎ জানার জন্য।
আমার অংকেতে মাথা নেই. কিন্তু জ্যোতিষীতে ইন্টারেস্ট আছে. তাই ট্যারো বেছে নিলাম। তাস দেখে ভুত-ভবিষ্যৎ বিচার করা। সোজা। ট্যারোর মজা হলো যে যার ভবিষ্যৎ বিচার হবে সে একটি তাস আটাত্তরটি তাসের বান্ডিল থেকে বেছে নিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ নিজেই বুঝে নেবে। আমাকে শুধু তাসের মানেটা তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে।
অনেক বই ঘাটাঘাটি করলাম। ইউ টিউব দেখলাম। তাস গুলোর ইতিহাস পড়লাম কেমন ভাবে তাদের সাজাতে হয় ইত্যাদি। বলা হয়নি - আমি কখনই ব্যাপারটা প্রচার করিনি। এটা শুধুই হবি। পয়সা রোজগারের ধান্দা নয়।
তবুও জানিনা কী করে জানাজানি হয়ে গেলো।
টের পেলাম সকাল এগারোটা নাগাদ পাড়ার এক অবাঙালী ভদ্রলোক যেদিন এসে হাজির হলেন।
"আপনি ভবিষ্যৎ বলেন?"
"কই না তো ?"
"এই যে অ বাবু বললেন ?"
আমি ফাঁপরে পড়লাম।
অ বাবু আমার বাবার বয়সী এবং অতি ঘনিষ্ঠ ভাবে পরিচিত। তাঁকে মিথ্যেবাদী প্রমাণ করা আমার পক্ষে অপরাধ জনক। তাই বললাম ,
"ওই একটু আধটু আর কি - তাস দেখে ... হবি এই মাত্র। "
"তাস দেখে ?"
ভদ্রলোকের চোখে মুখে অবিশ্বাস্যের পোলোর
"হ্যাঁ - ট্যারো ?"
"কী রো ?"
"যাকগে ... আপনার কী কোনো সমস্যা আছে ?"
"তা আছে বৈকি। কিন্তু আমি সেটা বলবো না। সেটা আপনি আমাকে বলবেন। "
বুঝলাম ভদ্রলোক আমার পরীক্ষা নিচ্ছেন।
আমি তাসের বান্ডিলটি বার করে সাজালাম এবং তার মধ্যে একটা যে কোনো তাস ওনাকে বেছে নিতে বললাম।
উনি একটি তাস বেছে আমাকে দেখাতে আমি একটি লম্বা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম , "আপকে জান কো খতরা হ্যায়। "
"ক্যা হ্যায় ?"
আমি রিপীট করলাম , "খ ত রা "
ভদ্রলোক আমার কথা শুনে তাচ্ছিল্যের হাঁসি হেঁসে বললেন, "ও সব বুঝিনা। আমার এই পাড়ায় একটি ফ্ল্যাট আছে যেটা একটি পরিবার অকুপাই করে রেখেছে। কিছুতেই খালি করছে না। আমায় উপায় বাতাও ফ্ল্যাট খালি করার।"
বড় মুশকিলে পড়লাম। আমার বিদ্যা অতদূর অবধি নয় যে আমি উপায় বাতলাতে পারি। তবুও অনেক মাথা চুলকে উত্তর দিলাম যে পরিবারটির বড় যিনি তাঁর সঙ্গে বসে আলোচনা করে দেখুন। ভদ্রলোকের আমার সমাধান মোটেই পছন্দসই হলো না। একটা শ্লেষযুক্ত হু: বলে উনি উঠে বেরিয়ে চলে গেলেন।
এর কিছুদিন পর সকালে কলিং বেল বেজে উঠলো।
দরজা খুলে দেখি একটি নিরীহ গোছের লোক খুবই বিমর্ষ মুখে দাড়াঁনো।
জিজ্ঞাসা করাতে জানালেন যে তিনি অমুক নম্বর ফ্ল্যাটের বাসিন্দা। ওনার বাড়িওয়ালা ফ্ল্যাট খালি করার জন্য ওনাকে উত্ত্যক্ত করে মারছেন। উনি অনেক বুঝিয়েছেন যে ওনার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। বিয়ে হয়ে গেলেই ফ্ল্যাট খালি করে গ্রামে ফিরে যাবেন। ভদ্রলোক রিটায়ার্ড। একটিমাত্র মেয়ে। এখন বিয়ের এতো খরচের মাঝে যদি বাড়ি খুঁজতে হয় তাহলে তো উনি বড় বিপদে পড়বেন। বাড়ি বদলানো মানেই ভাড়া বাড়া। শিরে সংক্রান্তি। তাই উনি বাড়িওয়ালাকে অনেক অনুনয় বিনয় করেছেন বাড়ি ছাড়ার জন্য এখন ওনাকে প্রেশার না দিতে। কিন্তু সে নাছোড়বান্দা। রোজই এসে হাজির হচ্ছে। ধমকাচ্ছে। গালি গালাজ করছে। উনি অনন্যোপায় হয়ে আমার কাছে এসেছেন। ওঁকেও অ বাবুই নাকি আমার কথা বলেছে।
মনে মনে অ বাবুর উপর রাগ ধরলেও কিছু না বলে ওনাকে ঘরে এনে বসালাম।তাসের বান্ডিল সাজিয়ে একটি তাস বেছে আমাকে দেখাতে বললাম। উনি তাই করলেন। গোবেচারা মানুষটির উপর মায়া হচ্ছিল। মিডল ক্লাস অর্থাৎ মধ্যবর্তী বর্গ সব সময়ই অশান্তিতে ভোগে। ভদ্রলোকের উসকো খুসকো চুল মাথার মাঝখানের টাকটিকে ঢাকার ব্যার্থ চেষ্টা করে হেরে গেছে। লোকটির মুখায়ব ফ্যাকাসে। এনেমিক মনে হলো। আহা! না খেয়ে বা আধ পেটা খেয়ে হয়তো মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা জমিয়েছেন সারা জীবন ভর। তার উপর বাড়িওয়ালার উৎপীরণ।
তাসটি বার করে উনি আমার হাতে দিতে আমি মনোযোগ সহকারে অনেকক্ষণ সেটিকে নিরীক্ষণ পরীক্ষণ করে বললাম,
"চিন্তা করবেন না। আপনি যেখানে আছেন সেখানেই থাকবেন যত দিন আপানার মন চায়।"
আমার কথা শুনে ভদ্রলোক যেন হাতে স্বর্গ পেলেন। আমায় হৃদয়ের অন্তঃকরণ থেকে ধন্যবাদ জানালেন। মনে হলো আমার কথা শুনে ওনার হলদেটে চেহারায় লালচে রং খেলে গেলো। নাকি আমারি চোখের ভুল।
এর কিছুদিন পর আমার কাজের মেয়েটি এসে জানালো পাড়ায় আজ নাকি দারুন গোল বেঁধেছিল । অমুক নম্বর ফ্ল্যাটের ভাড়াটে তার বাড়িওয়ালাকে বেদম প্রহার করেছে। আমি জিজ্ঞসালাম, "কেন ?"
জোনাকি রসিয়ে রসিয়ে জানালো বাড়িওয়ালা কয়েক জন গুন্ডা সঙ্গে করে এনে ভাড়াটে ভদ্রলোকের বাড়িতে হানা দিয়ে তাঁর জিনিসপত্র রাস্তায় ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলো। ভাড়াটে ভদ্রলোকের কোনো কথাই তারা শুনতে রাজি ছিল না। এরমধ্যে একজন গুন্ডা নাকি তাঁর মেয়ের হাত ধরে ঘর থেকে টেনে বার করার চেষ্টা করাতে ভদ্রলোক মরিয়া হয়ে হাতের কাছে যা পান তা দিয়ে লোকটিকে আঘাত করেন। লোকটা গুন্ডা হলেও পাল্টা মার বোধহয় আশা করেনি। টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায়। তাই দেখে ভাড়াটে ভদ্রলোকের সাহস আরেকটু বেড়ে যায় এবং তারপর উনিও লেগে যান মারামারি করতে। শেষমেষ পাড়ার লোকেরা মধ্যস্থতা করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু ততক্ষনে ভাড়াটে ভদ্রলোকটি বাড়িওয়ালার মাথায় জোরে একটা পাথর মেরে ফাটিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন । রক্তারক্তি কারবার। পুলিশ আসার উপক্রম হয়েছিল কিন্তু তার আগেই বাড়িওয়ালা ভাড়াটের কাছে হাত জোর করে মাপ চেয়ে তাকে বাড়িতে যতদিন ইচ্ছে থাকার অনুমতি দিয়ে দেন। জোনাকির পাবলিক রিলেশান ভালো। পাড়ার সব রকম কেচ্ছা কেলেঙ্কারির গল্প চাটনি সহযোগে আমার কাছে পৌঁছে যায়।
এর দু তিন দিন পর
অ বাবু হন্তদন্ত হয়ে হাজির ,
"শুনলাম নাকি তোমার কাছে অমূক আর অমূক বাবু দুজনেই এসেছিলেন ভাগ্য গণনার জন্য"।
মনে মনে বললাম আপনার দৌলতে।
"আর তুমি নাকি দুজনেরই একেবারে সঠিক বিচার করেছ ".
আমি আমতা আমতা করে "ওই আর কি "... বলাতে অমুক বাবু বললেন ,
"আঃ ! আর ভণিতা করতে হবে না। তুমি তো বাড়িওয়ালাকে বলেইছিলে ওঁর প্রাণ নিয়ে টানাটানি আছে আর ভাড়াটেকে বলেছিলে ও যেখানে আছে সেখানেই থাকবে। তাইতো ?"
আমি মাথা চুলকে বললাম , " ওই নিরীহ, শান্তিপ্রিয় মানুষটিকে দেখে বড়ো মায়া লাগছিলো তাই আর কি সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য ওই কথাটা বলেছিলাম। সেটা যে অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাবে তা কী করে জানবো"?
"সে যাই হোক। এখন একটা সাইন বোর্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। তোমার পসার এক্কেবারে কনফার্মড"। "
আমি কিছু বলার আগেই অ বাবু সোৎসাহে হনহন করে বেরিয়ে গেলেন। উনি বয়োঃজ্যেষ্ট এবং আমার সেলফ প্রোক্লেমড গার্জিয়ান। ওনাকে না করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবুও ..
বলা হয়নি এই ট্যারো কার্ডের বান্ডিলটি ওঁর মেয়ে সুমিতারই দেওয়া। শখ করে কিনেছিল কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই শখ ঘুঁচে গিয়ে আমাকে দিয়ে বলেছিল , "দিদি এ আমার দ্বারা হবে না। তোমার ইন্টারেস্ট আছে ; তুমি নিয়ে দ্যাখো "।
এখন ভাবছি ওঁকে বান্ডিলটা ফেরত দিয়ে দেবা।
সাইনবোর্ড লাগার আগে।
এই ট্যারো ফ্যারো আমাকে ও পোষাবে না।
Saturday, February 11, 2023
অদ্ভুতুড়ে
মনোজদের বাড়িতে একটা ছবি আছে - মনোজের প্রিয় ছবি। এই ছবিটি ওদের বাড়িতে কী করে এলো কেউ জানেনা। মনোজ প্রায়ই ওই ছবিটাকে মন দিয়ে দেখে। ছবিটাত যেই বাচ্চা ছেলেটার দুধের বাটিতে মেনি বেড়াল মুখ দিয়ে চুক-চুক করে সাবরাচ্ছে তাকে তার খুব আপনার মনে হয় - অচেনা বন্ধু কিন্তু বড়ই কাছের।
রাজা গোবিন্দনারায়ন কৃপণ - তাঁর চোরা কুঠুরিতে যে টাকার পাহাড় আছে তা গুনতে গুনতে ওনার সময় কাটে। যাকে বলে ফেভারিট পাস্ট টাইম। তবে উনি ভুল মেরে গেছেন যে টাকা খরচ না করলে তো সেই টাকা অচল হয়ে যায়।
গোয়েন্দা বরদাচরণ রাজা গোবিন্দনারায়নের ছোটবেলায় নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ছেলে কন্দর্পনারায়ণকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তিনি ডাকসাইটে, পরম দাইত্বশীল, কর্মঠ , কাজী পুলিশ। উনি সাধারণত: কোনো বাড়িতে সামনের দরজা দিয়ে ঢোকেন না। পিছনের দেয়াল টপকে ঢোকেন। এটা নাকি গোয়েন্দাগিরির একটি মৌলিক প্রিন্সিপাল। বরদার দৃঢ় বিশ্বাস যে রাজকুমার কন্দর্পনারায়ানকে খুঁজে বার করার ক্লু মনোজদের বাড়িতেই কোথাও পাওয়া যাবে। এই বিশ্বাসের মূল স্তোত্র কী বলা মুস্কিল।
নিশি দারোগা ততোধিক আদর্শবান ও এক্সপেরিয়েন্সড থানার হেড।তিনি কাউকে ছেড়ে কথা কন না।
গোল বাঁধলো যখন ভজ বাবুর হাতে একটি পিস্তল এসে জুটলো। পিস্তলটি আর কারো নয় বরদা বাবুর। ভীরু যখন অস্ত্রধারক হয় তখন তাঁর পৈশাচিক মনোবৃত্তি বন্ধনহীন হয়ে যায়। ভজ বাবু পিস্তল যুক্ত হয়ে সর্ব রকম কুকীর্তির নিষ্পত্তি করার প্রতিজ্ঞা করেন । সুদখোর মহাজনী কারবারী, যারা বাজারে গিয়ে দর দাম না করে কিনে জিনিসপত্রের দাম অহেতুক বাড়িয়ে তোলেন ( বিশেষ করে শার্দুল বাবু), কানাই মাছ ওয়ালা যে ভজ বাবুকে দেখে ভালো মাছ লুকিয়ে রাখে - এ সকল দুর্বৃত্তদের গান পয়েন্টে ওঠ বস না করিয়ে ভজ বাবু ঠিক করলেন দম নেবেন না। কানাই আবার রাতে ডাকাতি করে। তাঁকে ধরতে গিয়ে ভজ বাবু পড়লেন ডাকাতদের মাঝে। কিন্তু ভজ বাবু তখন নব সমাজ সৃজনে প্রতিশ্রুত।
ডাকাত দলের বড়ো সর্দারের আবার সেরাতে জ্বর হওয়াতে ডাকাতি মেজো সর্দার লীড করবে ঠিক ছিল । মেজো সর্দার কে ঠিক ডাকাত বলে মনে হয় না। যুবকটি অন্য ধরনের দেখতে। সে ঠিক করলো ভজ বাবুই আজ রাতে ডাকাতদের লীড করবেন। ভজ বাবু সর্বতের (ডাকাতদের দেওয়া) ঘোরে তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে গেলেন। আর কি ? ধুন্ধুমার ব্যাপার।
এদিকে নিশি দারোগার কাছে ভজ বাবুর দ্বারা পীড়িত অনেক লোক কমপ্লেন করাতে তিনি পুলিশ বল সমেত মানোজদের বাড়িতে ওয়ারেন্ট নিয়ে হাজির। ভজ বাবুকে গ্রেপ্তার করবেন। এখানে শুচিবাইগ্রস্ত ঠাকুরঝির কথা বলা হয়নি। তিনি ভোর বেলা গোবর ছড়া দিয়ে বাড়ি পরিষ্কার করেন। সন্ধ্যেবেলা পুলিশকে নোংরা বুট জুতো পড়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে দেবেন না। শুরু হলো এক আজব যুদ্ধ। ঠাকুরঝি ভার্সাস পুলিশ। লাঠি হাতে ঠাকুরঝি পুলিশদের রুখে দাঁড়াতে মনোজ সরোজ প্রমাদ গুনলো।
মেজকার ডাক পড়লো সিচুয়েশন সামলাতে। তিনি সমর স্থলে নামিয়ে দিলেন এক দল গরিমান - গরিলা + হনুমান! সে এক দেখার মত দৃশ্য!! এই জীবগুলো তাঁর নিজস্ব এক্সপেরিমেন্টের ফল প্রসূত।
ওদিকে রাজপ্রাসাদে পৌঁছে ডাকাত দলের মেজো সর্দারের রাজা গোবিন্দনারায়ণের পূর্বপুরুষদের অতিকায় জলছবি দেখে কেমন যেন মনে হতে লাগলো এই প্রাসাদে সে আগেও এসেছে।
গল্প প্রায়: বলেই ফেললাম। কিন্তু এখনো ক্লাইম্যাক্স অভি বাকি হ্যায় মেরে দোস্ত এবং তার জন্য পাঠকদের পড়তে হবে স্বানামধন্য ঔপন্যাসকার শ্রী শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখা ছোটদের জন্য "মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি " নামক ভারী মজার বইটি।
আমার ছোটদের বই পড়তে ভালো লাগে। তাই পড়ে ফেললাম। শীর্ষেন্দু বাবুর লেখার গুণাবলী সম্বন্ধে মন্তব্য করার ধৃষ্টতার সাহস আমার নেই. তবে পড়তে গিয়ে যেই জিনিস গুলো নজর কাড়ে সেগুলির কথা নিশ্চয় বলব:
বইটি লেখা জলের মতন - চ্যাপ্টারের বন্ধন নেই। তাই এক ঘটনা থেকে দ্বিতীয় দুর্ঘটনায় কাহিনী লাফিয়ে লাফিয়ে চলে।
অনেক পার্শবর্তী চরিত্র আছে যাদের কথা আমি এখানে উল্লেখ করিনি কিন্তু তাঁরাও মজার ও গল্পে অনাবশ্যক মনে হয় না।
যদিও বইটির নাম "মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি" কিন্তু গল্পে মনোজের বিশেষ কোনো রোল নেই।
মনোজদের বাড়িতে কন্দর্পনারায়ানের ছবি কী করে এলো এবং তার খবর বরদা ডিটেকটিভ কী ভাবে পেলো তা লেখক খোলসা করেননি।
বরদা এতো বছর ধরে যাকে খুঁজছিলো সে নাকের ডগায়ই ডাকাতেদের দলে বিদ্যমান - এটা প্লটকে একটু অগোছালো করে।
বইটি হাস্যরসাত্মক, ব্যাঙ্গাত্মক ও কৌতুকাত্মক। পড়লে টেনশান দূর হয়। মন মেজাজ ভালো হয়ে ওঠেই।
গল্পের চরিত্রগুলোর সঙ্গে রিলেট করা মোটেই শক্ত নয়। তারা আমাদের আশেপাশে পাওয়া যাবে।
আমার এই প্রথম শীর্ষেন্দু পড়া। ভালো লাগলো তাই একটা ছোটোখাটো রিভিউ লিখলাম। বাংলা গল্পের বইয়ের রিভিউও আমার এই প্রথম লেখা।
সব প্রথম মিলেমিশে একাকার না হয়ে যায় তাই এখানেই ইতি টানলাম। ও হ্যাঁ! বলতে ভুলে গেছি হৈচৈতে এই বৈয়ের ভিত্তিতে বানানো চলচ্চিত্রটিও দেখতে পারেন।
ভালো থাকবেন ও ভালো লেখা পড়বেন।
আশা রইলো।
Tuesday, January 10, 2023
ভালো ভুত
এই গল্পটি প্রথমে ফেবুতে তারপর স্টোরি মিরর ডট কমে এখন এখানে প্রকাশিত হলো....
আমার গল্প লিখতে খুব ভালো লাগে। ছোট গল্প। বিশেষ করে ভুতের গল্প। আমার রোমান্স ফোমান্সে ক্রিয়েটিভ স্যাটিস্ফ্যাকশন ঠিক আসে না। এই সময় খুক খুক করে কে যেন গলা খাঁকারি দিল। আমি তাতে কান দিলাম না। বললাম, এই নয় যে আমি ভৌতিক বা অলৌকিক জগতের কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ পেয়েছি। কিন্তু যা দেখা যায় না বা অনুভব করা যায় না তা কি একেবারেই ইহলোকে এক্সিস্ট করে না এটা কি কেউ হলপ করে বলতে পারে? তাছাড়া ভুত যে সব সময় খারাপই হতে হবে এর কোনো মানে নেই। ভালো, পরোপকারী ভুত ও হতেই পারে। নানা ধরনের মানুষ থাকতে পারে নানা ধরনের ভুত হতে পারে না?
কথা হচ্ছিল কলকাতা রাজধানীর এ সি ফার্স্ট ক্লাস কুপে তে বসে একজন বয়সী সহযাত্রীর সাথে। কাঁচা পাকা চুল, ছোটখাটো, পাতলা গড়ন, দুধে আলতায় গায়ের রং। ভদ্রলোকের চেহারার মধ্যে বেশ একটা পড়াশোনা জানা আভিজাত্যের ছাপ স্পষ্ট। আমাদের সঙ্গে আছেন আরো দুজন - মা ও মেয়ে। তারা চুপটি করে আমাদের কথা গিলছে আর একে অন্যকে দেখছে।
যার সঙ্গে কথা হচ্ছে উনি অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে একাগ্র চিত্তে আমার কথা শুনছেন আর মাথা নেড়ে সম্মতি জানাচ্ছেন। আমার ওনার এই অসম্ভব মন দিয়ে কথা শোনাটা খুব ভালো লাগছে। তাই হয়তো অনর্গল বকছি। নিজেকে থামাতে পারছি না। সাধারণতঃ আমার বাড়িতে কেউ আমাকে বিশেষ পাত্তা দেয় না। আমিও দিই না।
একাই যাচ্ছি কলকাতায় পিসিমনির সঙ্গে দেখা করতে। অনেক বছর পর। দেখি সময় পেলে কলকাতার বাইরে কিছু মফস্বল জায়গা ঘুরে দেখার ইচ্ছা আছে। শুনেছি এখনও অনেক এমন জায়গা আছে যেখানে নির্জনতার কোলে নানান রকম অভিজ্ঞতা হয় যা বুদ্ধি বা লজিকের বাইরে। লোকালয় আর জনবহুল মেট্রো শহরে তেমন ঘটনা বিরল। ভদ্রলোক আবার মাথা নাড়লেন।
রাতের খাবার পর বাথরুমে যাওয়ার জন্য উঠলাম। ঠায় বসে গেঁজিয়েছি। ফিরতে দেরি হলো কারণ বাথরুমের সামনে বেশ কিছু লোক অপেক্ষমান ছিল। ফিরে দেখি মা ও মেয়ে বেডিং পাততে ব্যস্ত। আমার বেডিংটা বোধহয় অ্যাটেনডেন্ট টান টান করে পেতে দিয়ে গেছে। সিনিয়র সিটিজেন হওয়ার অনেক অ্যাডভান্টেজ আছে।
কিন্তু সেই নিপাট ভালো মানুষটি কোথায়? বোধহয় উনিও বাথরুমের লাইনে আটকা পড়েছেন। শুতে যাবো - শুনলাম মা মেয়েকে বলছে বুড়ো বয়সে এরকম ভিমরতি অনেকের হয়। তোর রাঙাদিদার কথা মনে নেই? আপন মনে বক বক করতো? তবে এদের একলা বাড়ি থেকে বেরোতে দেওয়া উচিৎ নয়। কখন কি হয়ে যায়!
সকালে উঠে ও ভদ্রলোকটি কে কুপেতে পেলাম না। হয় তো মাঝ রাতে মোগল সরাই বা অন্য কোনো স্টেশনে নেমে গেছেন। ওনার সম্বন্ধে বিশেষ কিছুই জানা হয়নি। নিজের কথা বলতে এত ব্যস্ত ছিলাম। এখন খারাপ লাগছে। আহা কি সমবেদনশীল মানুষ ...সচরাচর দেখা যায় না।
কলকাতা থেকে ফিরেছি। দুদিন পর এক নাম করা পাবলিশার-এর চিঠি পেলাম। তারা আমার ছোট গল্প গুলো পাবলিশ করতে চায়। কোথায় পড়লো আমার ছোট গল্প জানিনা। তবে সেরা ভৌতিক গল্পের সিরিজে আমার লেখা স্থান পাবে বলেছে। মোটা একটি রকমের চেক ও পাঠিয়েছে চিঠির সঙ্গে।
বললাম না নানা রকমের মানুষ যেমন, তেমন নানা রকম ভুত ও তো আছে। আমার সহযাত্রীকে কথায় কথায় আফসোস করেছিলাম যে আজ অবধি আমার গল্প কোথাও ছাপা হয়নি। তখন হয়তো কোনো ভালো ভুত আশে পাশে ঘাপটি মেরে বসেছিল। আমার দুঃখের কথা শুনে....
আরে কি মুশকিল! বিশ্বাস হচ্ছে না? কেনো সত্যজিৎ বাবুর গুপ গাইন বাঘা বাইন দেখেন নি?
Copyright @ Geetashree Chatterjee