মনোজদের বাড়িতে একটা ছবি আছে - মনোজের প্রিয় ছবি। এই ছবিটি ওদের বাড়িতে কী করে এলো কেউ জানেনা। মনোজ প্রায়ই ওই ছবিটাকে মন দিয়ে দেখে। ছবিটাত যেই বাচ্চা ছেলেটার দুধের বাটিতে মেনি বেড়াল মুখ দিয়ে চুক-চুক করে সাবরাচ্ছে তাকে তার খুব আপনার মনে হয় - অচেনা বন্ধু কিন্তু বড়ই কাছের।
রাজা গোবিন্দনারায়ন কৃপণ - তাঁর চোরা কুঠুরিতে যে টাকার পাহাড় আছে তা গুনতে গুনতে ওনার সময় কাটে। যাকে বলে ফেভারিট পাস্ট টাইম। তবে উনি ভুল মেরে গেছেন যে টাকা খরচ না করলে তো সেই টাকা অচল হয়ে যায়।
গোয়েন্দা বরদাচরণ রাজা গোবিন্দনারায়নের ছোটবেলায় নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ছেলে কন্দর্পনারায়ণকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তিনি ডাকসাইটে, পরম দাইত্বশীল, কর্মঠ , কাজী পুলিশ। উনি সাধারণত: কোনো বাড়িতে সামনের দরজা দিয়ে ঢোকেন না। পিছনের দেয়াল টপকে ঢোকেন। এটা নাকি গোয়েন্দাগিরির একটি মৌলিক প্রিন্সিপাল। বরদার দৃঢ় বিশ্বাস যে রাজকুমার কন্দর্পনারায়ানকে খুঁজে বার করার ক্লু মনোজদের বাড়িতেই কোথাও পাওয়া যাবে। এই বিশ্বাসের মূল স্তোত্র কী বলা মুস্কিল।
নিশি দারোগা ততোধিক আদর্শবান ও এক্সপেরিয়েন্সড থানার হেড।তিনি কাউকে ছেড়ে কথা কন না।
গোল বাঁধলো যখন ভজ বাবুর হাতে একটি পিস্তল এসে জুটলো। পিস্তলটি আর কারো নয় বরদা বাবুর। ভীরু যখন অস্ত্রধারক হয় তখন তাঁর পৈশাচিক মনোবৃত্তি বন্ধনহীন হয়ে যায়। ভজ বাবু পিস্তল যুক্ত হয়ে সর্ব রকম কুকীর্তির নিষ্পত্তি করার প্রতিজ্ঞা করেন । সুদখোর মহাজনী কারবারী, যারা বাজারে গিয়ে দর দাম না করে কিনে জিনিসপত্রের দাম অহেতুক বাড়িয়ে তোলেন ( বিশেষ করে শার্দুল বাবু), কানাই মাছ ওয়ালা যে ভজ বাবুকে দেখে ভালো মাছ লুকিয়ে রাখে - এ সকল দুর্বৃত্তদের গান পয়েন্টে ওঠ বস না করিয়ে ভজ বাবু ঠিক করলেন দম নেবেন না। কানাই আবার রাতে ডাকাতি করে। তাঁকে ধরতে গিয়ে ভজ বাবু পড়লেন ডাকাতদের মাঝে। কিন্তু ভজ বাবু তখন নব সমাজ সৃজনে প্রতিশ্রুত।
ডাকাত দলের বড়ো সর্দারের আবার সেরাতে জ্বর হওয়াতে ডাকাতি মেজো সর্দার লীড করবে ঠিক ছিল । মেজো সর্দার কে ঠিক ডাকাত বলে মনে হয় না। যুবকটি অন্য ধরনের দেখতে। সে ঠিক করলো ভজ বাবুই আজ রাতে ডাকাতদের লীড করবেন। ভজ বাবু সর্বতের (ডাকাতদের দেওয়া) ঘোরে তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে গেলেন। আর কি ? ধুন্ধুমার ব্যাপার।
এদিকে নিশি দারোগার কাছে ভজ বাবুর দ্বারা পীড়িত অনেক লোক কমপ্লেন করাতে তিনি পুলিশ বল সমেত মানোজদের বাড়িতে ওয়ারেন্ট নিয়ে হাজির। ভজ বাবুকে গ্রেপ্তার করবেন। এখানে শুচিবাইগ্রস্ত ঠাকুরঝির কথা বলা হয়নি। তিনি ভোর বেলা গোবর ছড়া দিয়ে বাড়ি পরিষ্কার করেন। সন্ধ্যেবেলা পুলিশকে নোংরা বুট জুতো পড়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে দেবেন না। শুরু হলো এক আজব যুদ্ধ। ঠাকুরঝি ভার্সাস পুলিশ। লাঠি হাতে ঠাকুরঝি পুলিশদের রুখে দাঁড়াতে মনোজ সরোজ প্রমাদ গুনলো।
মেজকার ডাক পড়লো সিচুয়েশন সামলাতে। তিনি সমর স্থলে নামিয়ে দিলেন এক দল গরিমান - গরিলা + হনুমান! সে এক দেখার মত দৃশ্য!! এই জীবগুলো তাঁর নিজস্ব এক্সপেরিমেন্টের ফল প্রসূত।
ওদিকে রাজপ্রাসাদে পৌঁছে ডাকাত দলের মেজো সর্দারের রাজা গোবিন্দনারায়ণের পূর্বপুরুষদের অতিকায় জলছবি দেখে কেমন যেন মনে হতে লাগলো এই প্রাসাদে সে আগেও এসেছে।
গল্প প্রায়: বলেই ফেললাম। কিন্তু এখনো ক্লাইম্যাক্স অভি বাকি হ্যায় মেরে দোস্ত এবং তার জন্য পাঠকদের পড়তে হবে স্বানামধন্য ঔপন্যাসকার শ্রী শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখা ছোটদের জন্য "মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি " নামক ভারী মজার বইটি।
আমার ছোটদের বই পড়তে ভালো লাগে। তাই পড়ে ফেললাম। শীর্ষেন্দু বাবুর লেখার গুণাবলী সম্বন্ধে মন্তব্য করার ধৃষ্টতার সাহস আমার নেই. তবে পড়তে গিয়ে যেই জিনিস গুলো নজর কাড়ে সেগুলির কথা নিশ্চয় বলব:
বইটি লেখা জলের মতন - চ্যাপ্টারের বন্ধন নেই। তাই এক ঘটনা থেকে দ্বিতীয় দুর্ঘটনায় কাহিনী লাফিয়ে লাফিয়ে চলে।
অনেক পার্শবর্তী চরিত্র আছে যাদের কথা আমি এখানে উল্লেখ করিনি কিন্তু তাঁরাও মজার ও গল্পে অনাবশ্যক মনে হয় না।
যদিও বইটির নাম "মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি" কিন্তু গল্পে মনোজের বিশেষ কোনো রোল নেই।
মনোজদের বাড়িতে কন্দর্পনারায়ানের ছবি কী করে এলো এবং তার খবর বরদা ডিটেকটিভ কী ভাবে পেলো তা লেখক খোলসা করেননি।
বরদা এতো বছর ধরে যাকে খুঁজছিলো সে নাকের ডগায়ই ডাকাতেদের দলে বিদ্যমান - এটা প্লটকে একটু অগোছালো করে।
বইটি হাস্যরসাত্মক, ব্যাঙ্গাত্মক ও কৌতুকাত্মক। পড়লে টেনশান দূর হয়। মন মেজাজ ভালো হয়ে ওঠেই।
গল্পের চরিত্রগুলোর সঙ্গে রিলেট করা মোটেই শক্ত নয়। তারা আমাদের আশেপাশে পাওয়া যাবে।
আমার এই প্রথম শীর্ষেন্দু পড়া। ভালো লাগলো তাই একটা ছোটোখাটো রিভিউ লিখলাম। বাংলা গল্পের বইয়ের রিভিউও আমার এই প্রথম লেখা।
সব প্রথম মিলেমিশে একাকার না হয়ে যায় তাই এখানেই ইতি টানলাম। ও হ্যাঁ! বলতে ভুলে গেছি হৈচৈতে এই বৈয়ের ভিত্তিতে বানানো চলচ্চিত্রটিও দেখতে পারেন।
ভালো থাকবেন ও ভালো লেখা পড়বেন।
আশা রইলো।
No comments:
Post a Comment