Wednesday, March 29, 2023

রাম রাম







কালী কালী মহাকালী কালীকে পাপনাশিনী
ধর্মার্থ কাম মোক্ষার্থ   কালিকায়ই  নমস্তুতে



এই মন্ত্রটা মনের মধ্যে কোথাও গেঁথে গেছে। প্রায়ই মনে মনে জপ করি - অকারণেই।  কে বা কোথায় এই মন্ত্রোচ্চারণ করেছিল আর আমি প্রথম কোথায় শুনেছিলাম মনে নেই।  মন্দিরে ঠাকুরমশাইকে এই মন্ত্রটা বলতে শুনেছি কিন্তু আমার স্মৃতিতে এই মন্ত্র তারও অনেক অনেক আগে থেকে গাঁথা।  

নামে জপের এক আলাদাই মাহাত্ম্য আছে। 

ছোটবেলায় মনে আছে আমাদের বাড়িতে খবরের কাগজ দিত বুড়ো এক বিহারী।  তার আসল নাম কেউ জানতো না।  সবাই তাকে রাম রাম বলে ডাকতো কারণ ও সব সময়ই রাম নাম জপত।  হাঁসি হাঁসি মুখ।  মাথা সর্বক্ষণ নোয়ানো।  যাই বলো না কেন তার শুধু একই জবাব "রাম রাম ". অদ্ভুৎ না ?  

খবর কাগজটা গোল করে মুড়ে রাবার ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে ছুঁড়েই জোরে বলতো রাম রাম।  যেন রাম নামের গুনেই খবর কাগজটা ঠিক জায়গায় পৌঁছে যাবে ।  তা একতলা হোক, দোতলা হোক কি তিনতলা হোক।  সবই রাম নামের উপরেই যেন নির্ভরশীল।  

টাকা পয়সার প্রতি তার কোনো মায়া ছিল না।  দিলে ভালো না দিলেও চলে।  তার কাজ শুধু খবর কাগজ বিলি করা। এও এক ধরণের তপস্যা ।  এখন সেটা বুঝতে পারি।  কর্মণ্যে বাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।  ফলের ইচ্ছা না করে শুধু নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে কাজ করে যাওয়া।  

প্রশ্ন হচ্ছে এই চল্লিশ বছরের কর্ম জীবনে কী সত্যিই এই দীক্ষায় আমি দীক্ষিত হতে পেরেছি ? মিথ্যা বলব না।  একেবারেই নয়।  কোনো না কোনো সময় মনের কোনো এক কোনে  হয়তো  অযথা দুঃখ জমেছে।  মনে হয়েছে কিছুই তো হলো না।  কিছুই তো পেলাম না। 




একবার রাম রাম  এই নামের মাহাত্ম্য বুঝিয়ে বলেছিল গ্রামে এক ঝড়ের রাতে কোন এক বট গাছের তলায় সে আশ্রয় নিয়েছিল। সে কি তুমুল বৃষ্টি আর পাগলা হাওয়ার দাপট! চারিদিকে শুধু ফাঁকা মাঠ। আর ঝর ঝর বর্ষণ।   কী মনে করে হঠাৎ রাম রাম সেই অঝোর বর্ষণেই গাছের  ছায়া থেকে বেরিয়ে রাম রাম নাম নিতে নিতে বাড়ির দিকে রওনা হয়।  কতক্ষনই বা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে রাত কাটানো যায়।  বৃষ্টি থামার তো নাম নেই। 

কিন্তু  কী আশ্চর্য ! গাছের ছায়া পেরিয়ে কিছু দূর হাঁটা দেওয়ার পরই  কড়  কড়  কড়াৎ শব্দে বজ্রপাত আর পড়বি তো পড় সেই গাছটারই উপর যেই গাছের নিচে রাম রাম আশ্রয় নিয়েছিল। পিছন পানে তাকিয়ে রাম রাম শুধু নাম জপ করেছিল হৃদয়ের অন্তঃকরণ থেকে বিশ্বাসের বল সংগৃহীত করে। 

ঘটনাটা কাকতালীয় বলে উড়িয়েও দেওয়া যায়।  আবার বিশ্বাসে  মিলায়ে বস্তু  তর্কে বহুদূর ! অনেক কিছু আমাদের বুদ্ধি বা বিবেচনার বাইরে।  

রাম রামের ছেলেটিও ছিল একেবারে রাম রামের মতন. নম্র, ভদ্র , সভ্য আর রাম নামে বিলীন।  এরকম লোক এখন আর পাওয়া যায় না। 

স্বামী  সর্বপ্রিয়ানন্দজীর  অদ্বৈতবাদের উপর  চর্চা ইউ টিউবে শুনতে শুনতে  ভাবছি ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংস বলেছেন যত মত  তত  পথ। এও  এক পথ  ইশ্বরকে লাভ করার। ভক্তিতে  আপ্লুত হয়ে ডাকা ।  উনি নিশ্চয় সাড়া দেবেন। দ্যাখা দেবেন। কোনো না কোনো রূপে।  কোনো না কোনো ভাবে। আমাদের শুধু একমনে ডেকে যাওয়াই ধর্ম।  ইষ্ট মন্ত্র। 

No comments:

Post a Comment