কয়েকটা বই আর কিছু স্মৃতি
হঠাত সেদিন বইয়ের আলমারিতে হাথ পড়ে গেল ।ঘাটতে গিয়ে কিছু পুরানো বই বেরিয়ে পড়লো। হলদে পাতা প্রায় মুছে যাওয়া কালি আঙ্গুলের ঘষা লাগলেই মনে হয় এই বুঝি ছিড়ে যাবে। কিন্তু আহ! সেই জীর্ণ পাতার কী মন মাতানো গন্ধ!! বই গুলোতে হাত পড়তেই অনেক দিনের আগেকার, বলতে গেলে শৈশবের , কথা মনে পড়ে গেল। বাবু বলতেন ভালো বই পড়তে । তখন অবশ্য ভালো মন্দের পার্থক্য বুঝতাম না।যখন বুঝতে শিখলাম তখন বই ঘাটার সময় বিরল ।
এইতো সেদিন কালী বাডিতে বই মেলা হয়ে গেল।বাংলা বইয়ের জগত যে কত বদলে গেছে স্টলগুলোতে ঘুরতে ঘুরতে তাই উপলব্ধি করলাম । বিশ্ব ভারতীর একশত বত্সর পূর্ণ হওআতে এখন রবীন্দ্র রচনা সম্পাদনের অধিকার আর সীমিত নেই। ছোট বড সব সম্পাদকই বই ছাপার অধিকার রাখে।তাই অনেক নাম না জানা পাবলিশার্সের স্টল এও রবীন্দ্র রচনাবলীর সম্ভার। কিন্তু মনটা খুঁত খুঁত করছিল । কী যেন একটা ব্যপার নেই। বইয়ের আকার বদলে গেছে - ছোটো ছোটো লেখা , পাতলা পাতা - সেই হলুদ মলাটের উপর লাল কালির বাঁকা হাতের লেখায় "রাজর্ষী" বা "বিচিত্র প্রবন্ধ" ভীষণ মিস করছিলাম। টের পেলাম বয়স হয়েছে । পরিবর্তন কে মেনে নেয়ার ক্ষমতা ক্রমে কমে আসছে।
আরও মনে পড়ে... বাংলা শেখার সেই দিনগুলি । আমার প্রথম বাংলা শেখা শিশু ভারতীতে - যাকে আজকের দিনে লোকে বলে প্লে স্কুল ।রেণু আন্টি আমাদের বাংলা পডাতেন । শ্যামলা রং , চোখে চশমা , হাঁসি হাঁসি মুখ , নরম মনের মানুষ , বাচ্চাদের ভালবাসতেন । বাচ্চারাও তাঁকে খুব ভালবাসত । সাদা সারি কালো পাড় - বোধহয় অল্প বয়সেই বিধবা হযেছিলেন।বিদ্যাসাগর মহাশয়ের "বর্ণ পরিচয়" ওঁর কাছেই শেখা ।
তারপর সেন্ট থমাস স্কুল ...বাংলা শেখায় বাধা পড়লো ।
ক্লাস সেভেনে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে স্কুল বদল - লেডি আরউইন । বাবা বললেন বাংলা স্কুলে পড়লে মাতৃ ভাষাটা চোস্ত হবে । তবে আমার বাংলা শেখা আসলে গল্পের বইয়ের মাধ্যমে । তার মজাই আলাদা । গল্পের রঙ্গীন জগত তো আছেই তার সঙ্গে সেই শতেক বার পড়া আধ ছেঁড়া পুরনো বইয়ের পাতার মন মাতানো সোদা গন্ধ । তার নেশা যে সব নেশা ছাপিয়ে পাগল করে... তার আনন্দ যে অনির্বচনীয় । যারা সেই আনন্দ অনুভব করেছেন বা সেই নেশায় ডুবেছেন... তাঁদের কী আর কোনো স্কুলের পাঠ্যক্রমের দরকার আছে ?
No comments:
Post a Comment