Saturday, September 20, 2025

আবার মিতিন


মিতিন এবার পরিবার সহ কুলুতে। বেড়াতে গিয়ে ওই আর কি যা হয় চোর ছ্যাঁচোর ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়া। ঢেকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভানে। দশহরার সময় কুলু ভিড়ময়। থাকার জায়গা পাওয়া ভার। আগের থেকে বুকিং যে পার্থ কেন করেনি! 

শেষে ওদের লোকাল ড্রাইভার টিংকু সিংহের সৌজন্যে, কুলু থেকে একটু বাইরে, একটি কটেজে দুটি ঘর পাওয়া গেলো। একটিতে মিতিন, পার্থ ও বুমবুম আরেকটাতে মিতিনের বোন সহেলি, বর অবনী ও মেয়ে টুপুর ( মিতিনের সহযোগী)। তোমরা জানো নিশ্চই মিতিন একজন পেশাদার গোয়েন্দা । ওর এজেন্সির নাম থার্ড আই ।

তা যা বলছিলাম । কটেজটা বেশ ছিমছাম , সাজানো গোছানো। কিন্তু গোল বাঁধলো যখন মিতিনের ছেলে বুমবুম কম্পিউটার টেবিলের ড্রয়ারে একটা পেনড্রাইভ কুড়িয়ে পেলো। কৌতূহলী মিতিন আর ওর স্যাঙ্গাত টুপুর  (বোনঝি) তৎক্ষণাৎ বসে পড়ল পেনড্রাইভে কি আছে দেখতে। 

ও বাব্বা:! এ কি যে সে ব্যাপার। পেনড্রাইভ ভর্তি যে নাম করা আঁকিয়ে নিকোলাস রোয়েরিকের আঁকা পেইন্টিংয়ের ফটোতে ভরা!! আবার সে রাত্রেই কটেজের মালিক বিভব শর্মার সঙ্গে স্থানীয় এক চিত্রকর , বৈজনাথ রাইএর, কথা কাটাকাটি কানে এলো। বৈজনাথ রেগেমেগে চলে যাবার পর বিভব শর্মাকে পরের দিন মিতিন প্রশ্ন করতে ছাড়ে? 

জানা গেলো বৈজনাথ কে নাকি দুজন টুরিস্ট, যারা এই কটেজেই, মিতিনদের ঘরখানাতে উঠেছিল, তিনটি চিত্র বানাতে কিছু অগ্রিম টাকা দেয়। বৈজনাথ পেইন্টিংগুলি বানিয়েও দ্যান। কিন্তু বাকি টাকা বৈজনাথকে না দিয়েই সেই দুজন টুরিস্ট হাপিস। বোঝো কাণ্ড!

ওই দিকে বিকেলে দশহরার মেলাতে বৈজনাথের সঙ্গে মিতিনের আকস্মিক ভাবে দ্যাখা । মিতিন গল্পো জুড়ে দেয়।  বৈজনাথ কথায় কথায় জানান যে তাঁকে ওই দুজন টুরিস্ট রোয়েরিক সাহেবের তিন খানা আঁকা ছবির নকল করতে দিয়েছিল।

পর দিন আর সোজা মানালি যাওয়া হলো না। মানালির পথে নাগোরে রোয়েরিক সাহেবের আর্ট গ্যালারিতে ঢু মারা ঠিক হলো। পোঁছে এ কি ধাঁধা ?

আর্ট গ্যালারিতে কেউ বা কারা রাত্রে গ্রিলের দরজা কেটে জানালার কাঁচ ভেঙে ঢুকবার চেষ্টা করেছে। রাতের গার্ডকে হাত পা মুখ বেঁধে খাদের ধারে ফেলে রাখা হয়েছে। খানাতল্লাশি চলছে। স্বয়ং ডি এস পি, আশুতোষ শাহের পর্যবেক্ষণে। 

মিতিন নিজের পরিচয় দিল ডি এস পি ও গ্যালারির ম্যানেজার, কিশনলাল দুগ্গর কে। পেনড্রাইভটি দেখিয়ে জানালো কি ভাবে সেটা পেয়েছে আর কী আছে তার মধ্যে। একটি অনুরোধ ও রাখলো। ফার্স্ট ফ্লোরে, যেখান, গরাদ ও কাঁচ ভাঙ্গা হয়েছে, সেখানকার ছবিগুলো আবার নিরীক্ষণ করা হোক। 

কিছুক্ষন পর কিশনলাল দুগ্গর ফিরে এসে মাথায় হাত দিয়ে বসলো। হ্যাঁ মিতিন যা সন্দেহ করেছে ঠিক তাই। তিনটি ছবির অরিজিনাল বেমালুম লোপাট ও তার জায়গায় তাদের কপি রাখা। আশুতোষ শাহ রেগে কাঁই। এর একটা হ্যস্ত ন্যস্ত করতেই হবে। কিশনলাল তো মিতিনকে বলেই ফেললো একটু ব্যাপারটা দেখে নিতে মানে পুলিশী ইনভেস্টিগেশনের সঙ্গে সঙ্গে একটা প্যারালাল ইনভেস্টিগেশন চালাতে। মিতিন এক কথায় রাজি। 

তারপর আর কি ? কুলু থেকে নাগোর থেকে মানালি থেকে মণিকরন সাহাব থেকে আবার কুলু চোরদের পিছন পিছন দৌড়ানো। শেষমেষ মিতিন বিজয়িনী। 

গল্পটি ইউটিউবের থ্রিলারল্যান্ডে শোনা। ভালো লাগলো ওদের উপস্থাপনা। তাই জানালাম। ভালো লাগলে শুনো। সুচিত্রা ভট্টাচার্যর লেখা মিতিন মাসি সিরিজের 
কুড়িয়ে পাওয়া পেনড্রাইভ। 

এই গল্পের মূল আকর্ষণ হলো কুলু মানালি এবং তার আশেপাশের সব জায়গাগুলোর বিষদ বর্ণনা। আর ঐতিহাসিক শিল্পী নিকোলাস  রোয়েরিক ও তার আর্ট গ্যালারিটিকে প্লটে সম্মিলিত করা।

বইটি আমাজনে উপলব্ধ ও দেখলাম। পড়তেও পারো।

আবার দ্যাখা হবে...

টাটা 

পুনশ্চ : উপরের ছবিটি থ্রিলারল্যান্ডের ভিডিও থেকে একটি স্ক্রীন গ্র্যাব 




Monday, September 15, 2025

ভর দুপুরে

এক পশলা বৃষ্টির পরেই আকাশটা শারদীয় লাগে। যদিও এখন বর্ষাকাল শরৎ নয়। আবার কিছুক্ষণের মধ্যেই একগাদা কালো ভারি মেঘ এসে জমজমাট নীল রংটা মুছে ফেলে। প্রায় দুমাস যাবৎ এই চলছে। রোদ আর অন্ধকারের খেলা।

এখন পুজো আসছে বলেই হয়তো বৃষ্টি থেমেছে। কিন্তু বাদলের মেজাজের কোনো ঠিক নেই। কখন যে আবার ঝরঝর করে জলে জলাক্কার করবে কে জানে।
দুপুরে পিছনের দরজা দিয়ে এক ফালি সোনালী রোদ ঘরের দেওয়ালের গায়ে তেরছা ভাবে এসে পড়েছে। এরকম নরম দুপুরে বই পড়তে পড়তে ঝিম ধরে। মনে হয় বসে ঢুলি ওই চিলতে রোদ্দুরটাকে জাপটে ধরে। আবার কবে আসবে কে জানে।

গড়িমসি করি। বাইরের দরজায় কে যেন টোকা মারল। উঠে দেখতে ইচ্ছে করে না। দুপুরের আমেজ ভঙ্গ করে কে? চেঁচিয়ে বলি এখন নয় পরে এস। তবুও টোকা থামে না। আরো জোড়ে ...

উঠে দরজা খুলে দেখি কেউ নেই । একখানা হ্যান্ডবিল মাটিতে লুটোচ্ছে। তুলে দেখি লেখা আপনি কি এখনো বাঁচতে চান? যোগাযোগ করুন এই নম্বরে XXXXXX৯৯৯৯।

কি অবান্তর প্রশ্ন। কাগজটা ছিঁড়ে ফেলে দিই।

***

মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যায়। বালিশের পাশে মোবাইলে সময় দেখি - একটা বাজতে দু মিনিট। ঘুমের মধ্যে মনে হয়েছিল কেউ যেন দরজায় কড়া নাড়ল। এত রাতে ! পাশ ফিরে শুয়ে ভাবলাম স্বপ্ন হয়তো। না:! আবার যেন আওয়াজ হলো। 

কিছুক্ষন পর চৌকিদারের শীষ দেওয়ার শব্দ শুনলাম। ঠক ঠক ঠকাং - ওরই হাতের লাঠির আওয়াজ । বাড়ির সামনের পার্কের রেলিংগুলোতে বাজাতে বাজাতে যায় । একটু সাহস বাড়ে। উঠে সামনের দরজা খুলি। কই কেউ নেই তো। ব্যালকনিতে একটা চৌকো কাগজের টুকরো পড়ে আছে। হ্যান্ডবিল ভেবে তুলি। কিন্তু এত রাতে কেই বা হ্যান্ডবিল বিলোয়? 

কাগজটার এপিঠ ওপিঠ দেখি। কিছু লেখা নেই। শুধু মাঝখানে  একটা প্রশ্ন চিহ্ন আঁকা। সাদার উপর কালো। ব্যালকনির ধারে গ্রিল লাগানো দেওয়াল । বেশি উঁচু নয়। কোমর অবধি। দেওয়ালটার ধারে এলেই গলির রাস্তাটা দেখা যায়। জনহীন, নিঃস্তব্ধ। আরেকটু ঝুঁকে দেখি। দূর অনেকদূর অবধি দেখা যায়। চৌকিদার তার এই গলির রাউন্ড শেষ করে পাশের গলিতে টহল দিচ্ছে। আওয়াজ পেলাম। 

ঘন অন্ধকারে বড় বড় গাছগুলি ছায়ায় ঘেরা। গলির মোড়ে সেই জমাট ছায়ার মধ্যে মনে হল কে যেন নিবিড় হয়ে মিলিয়ে গেল। ছায়াসম।

দরজা বন্ধ করে শোবার ঘরে ফিরে এলাম। যদিও জানি আজ আর ঘুম হবে না।