এখন পুজো আসছে বলেই হয়তো বৃষ্টি থেমেছে। কিন্তু বাদলের মেজাজের কোনো ঠিক নেই। কখন যে আবার ঝরঝর করে জলে জলাক্কার করবে কে জানে।
দুপুরে পিছনের দরজা দিয়ে এক ফালি সোনালী রোদ ঘরের দেওয়ালের গায়ে তেরছা ভাবে এসে পড়েছে। এরকম নরম দুপুরে বই পড়তে পড়তে ঝিম ধরে। মনে হয় বসে ঢুলি ওই চিলতে রোদ্দুরটাকে জাপটে ধরে। আবার কবে আসবে কে জানে।
গড়িমসি করি। বাইরের দরজায় কে যেন টোকা মারল। উঠে দেখতে ইচ্ছে করে না। দুপুরের আমেজ ভঙ্গ করে কে? চেঁচিয়ে বলি এখন নয় পরে এস। তবুও টোকা থামে না। আরো জোড়ে ...
উঠে দরজা খুলে দেখি কেউ নেই । একখানা হ্যান্ডবিল মাটিতে লুটোচ্ছে। তুলে দেখি লেখা আপনি কি বাঁচতে চান? যোগাযোগ করুন এই নম্বরে XXXXXX৯৯৯৯।
কি অবান্তর প্রশ্ন। কাগজটা ছিঁড়ে ফেলে দিই।
***
মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যায়। বালিশের পাশে মোবাইলে সময় দেখি - একটা বাজতে দু মিনিট। ঘুমের মধ্যে মনে হয়েছিল কেউ যেন দরজায় কড়া নাড়ল। এত রাতে ! পাশ ফিরে শুয়ে ভাবলাম স্বপ্ন হয়তো। না:! আবার যেন আওয়াজ হলো।
কিছুক্ষন পর চৌকিদারের শীষ দেওয়ার শব্দ শুনলাম। ঠক ঠক ঠকাং - ওরই হাতের লাঠির আওয়াজ । বাড়ির সামনের পার্কের রেলিংগুলোতে বাজাতে বাজাতে যায় । একটু সাহস বাড়ে। উঠে সামনের দরজা খুলি। কই কেউ নেই তো। ব্যালকনিতে একটা চৌকো কাগজের টুকরো পড়ে আছে। হ্যান্ডবিল ভেবে তুলি। কিন্তু এত রাতে কেই বা হ্যান্ডবিল বিলোয়?
কাগজটার এপিঠ ওপিঠ দেখি। কিছু লেখা নেই। শুধু মাঝখানে একটা প্রশ্ন চিহ্ন আঁকা। সাদার উপর কালো। ব্যালকনির ধারে গ্রিল লাগানো দেওয়াল । বেশি উঁচু নয়। কোমর অবধি। দেওয়ালটার ধারে এলেই গলির রাস্তাটা দেখা যায়। জনহীন, নিঃস্তব্ধ। আরেকটু ঝুঁকে দেখি। দূর অনেকদূর অবধি দেখা যায়। চৌকিদার তার এই গলির রাউন্ড শেষ করে পাশের গলিতে টহল দিচ্ছে। আওয়াজ পেলাম।
ঘন অন্ধকারে বড় বড় গাছগুলি ছায়ায় ঘেরা। গলির মোড়ে সেই জমাট ছায়ার মধ্যে মনে হল কে যেন নিবিড় হয়ে মিলিয়ে গেল। ছায়াসম।
দরজা বন্ধ করে শোবার ঘরে ফিরে এলাম। যদিও জানি আজ আর ঘুম হবে না।