"Vanderloost -Speak Your Heart Out" is a vagrant and bizarre conglomerate of consequential and inconsequential moments, transient and stagnant thoughts, fickle and rigid perceptions, forgettable and not so forgettable anecdotes and experiences, day to day trivia, cornucopia of hard hitting realities and pristine imageries and most importantly people whom I think I know , whom I'd like to know and whom I do not want to know.
Wednesday, March 29, 2023
রাম রাম
Friday, March 10, 2023
ট্যারো
এই ছোটো গল্পটি স্টোরি মিরর ডট কমে ও পাঠক পাঠিকারা পড়তে পারেন
রিটায়ার করার আগে থেকেই মাথায় অনেক রকম খেয়াল পাকনা মেরে উড়ছিল। খেয়াল মানে যাকে ইংরেজিতে বলে ফ্যান্সিফুল থটস। কী করে সময় কাটানো যায়। অফিসের কলিগ ও বন্ধুরা নানান আইডিয়া চাপালো -
"তোর তো লেখার খুব শখ। বই-টই ছাপিয়ে ফ্যাল " - যেন কত সোজা।
"আমাদের দেশে কত কিছু আছে দ্যাখার - ঘুরতে যা " - মাগো! আমি চিরকালের ঘরকুনো আমাকে ঘুরতে যেতে বলে ?
"বই পড় " - পড়ি ..আর কত পড়বো !
"কিছু শেখ " - যেমন ?
"কোনো এন জি ও জয়েন কর" - ঠিকানা দে .. চুপ।
শেষমেষ ট্যারোতে আটকালাম। বাবাকে জ্যোতিষ শাস্ত্র চর্চা করতে দেখেছি। আমাদের বাড়িতে এস্ট্রোলজিক্যাল ম্যাগাজিন প্রতি মাসে আসত । বাবা পড়তেন। সেকালের জ্যোতিষী মানে একখানা চটি বই যার মধ্যে লগারিদমের মতন কী সব ছাই ভস্ম নাম্বারের মতন লেখা তা দেখে পাতার পর পাতা অংক কষা - অক্ষাংশ .. দ্রাঘিমাংশ ..জন্ম তারিখ ..ক্ষণ.. জন্মকালে গ্রহের অবস্থান .. জন্ম স্থান.. আরও কত কি । তারপর গম্ভীর মুখে কোন গ্রহ কোথায় বর্তমানে অবস্থিত তা নিয়ে বুঝিয়েদের সঙ্গে আলোচনা করা। যার ঠিকুজি তাকে বেশ কিছু দিন অপেক্ষা করতে হতো ভবিষ্যৎ জানার জন্য।
আমার অংকেতে মাথা নেই. কিন্তু জ্যোতিষীতে ইন্টারেস্ট আছে. তাই ট্যারো বেছে নিলাম। তাস দেখে ভুত-ভবিষ্যৎ বিচার করা। সোজা। ট্যারোর মজা হলো যে যার ভবিষ্যৎ বিচার হবে সে একটি তাস আটাত্তরটি তাসের বান্ডিল থেকে বেছে নিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ নিজেই বুঝে নেবে। আমাকে শুধু তাসের মানেটা তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে।
অনেক বই ঘাটাঘাটি করলাম। ইউ টিউব দেখলাম। তাস গুলোর ইতিহাস পড়লাম কেমন ভাবে তাদের সাজাতে হয় ইত্যাদি। বলা হয়নি - আমি কখনই ব্যাপারটা প্রচার করিনি। এটা শুধুই হবি। পয়সা রোজগারের ধান্দা নয়।
তবুও জানিনা কী করে জানাজানি হয়ে গেলো।
টের পেলাম সকাল এগারোটা নাগাদ পাড়ার এক অবাঙালী ভদ্রলোক যেদিন এসে হাজির হলেন।
"আপনি ভবিষ্যৎ বলেন?"
"কই না তো ?"
"এই যে অ বাবু বললেন ?"
আমি ফাঁপরে পড়লাম।
অ বাবু আমার বাবার বয়সী এবং অতি ঘনিষ্ঠ ভাবে পরিচিত। তাঁকে মিথ্যেবাদী প্রমাণ করা আমার পক্ষে অপরাধ জনক। তাই বললাম ,
"ওই একটু আধটু আর কি - তাস দেখে ... হবি এই মাত্র। "
"তাস দেখে ?"
ভদ্রলোকের চোখে মুখে অবিশ্বাস্যের পোলোর
"হ্যাঁ - ট্যারো ?"
"কী রো ?"
"যাকগে ... আপনার কী কোনো সমস্যা আছে ?"
"তা আছে বৈকি। কিন্তু আমি সেটা বলবো না। সেটা আপনি আমাকে বলবেন। "
বুঝলাম ভদ্রলোক আমার পরীক্ষা নিচ্ছেন।
আমি তাসের বান্ডিলটি বার করে সাজালাম এবং তার মধ্যে একটা যে কোনো তাস ওনাকে বেছে নিতে বললাম।
উনি একটি তাস বেছে আমাকে দেখাতে আমি একটি লম্বা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম , "আপকে জান কো খতরা হ্যায়। "
"ক্যা হ্যায় ?"
আমি রিপীট করলাম , "খ ত রা "
ভদ্রলোক আমার কথা শুনে তাচ্ছিল্যের হাঁসি হেঁসে বললেন, "ও সব বুঝিনা। আমার এই পাড়ায় একটি ফ্ল্যাট আছে যেটা একটি পরিবার অকুপাই করে রেখেছে। কিছুতেই খালি করছে না। আমায় উপায় বাতাও ফ্ল্যাট খালি করার।"
বড় মুশকিলে পড়লাম। আমার বিদ্যা অতদূর অবধি নয় যে আমি উপায় বাতলাতে পারি। তবুও অনেক মাথা চুলকে উত্তর দিলাম যে পরিবারটির বড় যিনি তাঁর সঙ্গে বসে আলোচনা করে দেখুন। ভদ্রলোকের আমার সমাধান মোটেই পছন্দসই হলো না। একটা শ্লেষযুক্ত হু: বলে উনি উঠে বেরিয়ে চলে গেলেন।
এর কিছুদিন পর সকালে কলিং বেল বেজে উঠলো।
দরজা খুলে দেখি একটি নিরীহ গোছের লোক খুবই বিমর্ষ মুখে দাড়াঁনো।
জিজ্ঞাসা করাতে জানালেন যে তিনি অমুক নম্বর ফ্ল্যাটের বাসিন্দা। ওনার বাড়িওয়ালা ফ্ল্যাট খালি করার জন্য ওনাকে উত্ত্যক্ত করে মারছেন। উনি অনেক বুঝিয়েছেন যে ওনার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। বিয়ে হয়ে গেলেই ফ্ল্যাট খালি করে গ্রামে ফিরে যাবেন। ভদ্রলোক রিটায়ার্ড। একটিমাত্র মেয়ে। এখন বিয়ের এতো খরচের মাঝে যদি বাড়ি খুঁজতে হয় তাহলে তো উনি বড় বিপদে পড়বেন। বাড়ি বদলানো মানেই ভাড়া বাড়া। শিরে সংক্রান্তি। তাই উনি বাড়িওয়ালাকে অনেক অনুনয় বিনয় করেছেন বাড়ি ছাড়ার জন্য এখন ওনাকে প্রেশার না দিতে। কিন্তু সে নাছোড়বান্দা। রোজই এসে হাজির হচ্ছে। ধমকাচ্ছে। গালি গালাজ করছে। উনি অনন্যোপায় হয়ে আমার কাছে এসেছেন। ওঁকেও অ বাবুই নাকি আমার কথা বলেছে।
মনে মনে অ বাবুর উপর রাগ ধরলেও কিছু না বলে ওনাকে ঘরে এনে বসালাম।তাসের বান্ডিল সাজিয়ে একটি তাস বেছে আমাকে দেখাতে বললাম। উনি তাই করলেন। গোবেচারা মানুষটির উপর মায়া হচ্ছিল। মিডল ক্লাস অর্থাৎ মধ্যবর্তী বর্গ সব সময়ই অশান্তিতে ভোগে। ভদ্রলোকের উসকো খুসকো চুল মাথার মাঝখানের টাকটিকে ঢাকার ব্যার্থ চেষ্টা করে হেরে গেছে। লোকটির মুখায়ব ফ্যাকাসে। এনেমিক মনে হলো। আহা! না খেয়ে বা আধ পেটা খেয়ে হয়তো মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা জমিয়েছেন সারা জীবন ভর। তার উপর বাড়িওয়ালার উৎপীরণ।
তাসটি বার করে উনি আমার হাতে দিতে আমি মনোযোগ সহকারে অনেকক্ষণ সেটিকে নিরীক্ষণ পরীক্ষণ করে বললাম,
"চিন্তা করবেন না। আপনি যেখানে আছেন সেখানেই থাকবেন যত দিন আপানার মন চায়।"
আমার কথা শুনে ভদ্রলোক যেন হাতে স্বর্গ পেলেন। আমায় হৃদয়ের অন্তঃকরণ থেকে ধন্যবাদ জানালেন। মনে হলো আমার কথা শুনে ওনার হলদেটে চেহারায় লালচে রং খেলে গেলো। নাকি আমারি চোখের ভুল।
এর কিছুদিন পর আমার কাজের মেয়েটি এসে জানালো পাড়ায় আজ নাকি দারুন গোল বেঁধেছিল । অমুক নম্বর ফ্ল্যাটের ভাড়াটে তার বাড়িওয়ালাকে বেদম প্রহার করেছে। আমি জিজ্ঞসালাম, "কেন ?"
জোনাকি রসিয়ে রসিয়ে জানালো বাড়িওয়ালা কয়েক জন গুন্ডা সঙ্গে করে এনে ভাড়াটে ভদ্রলোকের বাড়িতে হানা দিয়ে তাঁর জিনিসপত্র রাস্তায় ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলো। ভাড়াটে ভদ্রলোকের কোনো কথাই তারা শুনতে রাজি ছিল না। এরমধ্যে একজন গুন্ডা নাকি তাঁর মেয়ের হাত ধরে ঘর থেকে টেনে বার করার চেষ্টা করাতে ভদ্রলোক মরিয়া হয়ে হাতের কাছে যা পান তা দিয়ে লোকটিকে আঘাত করেন। লোকটা গুন্ডা হলেও পাল্টা মার বোধহয় আশা করেনি। টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায়। তাই দেখে ভাড়াটে ভদ্রলোকের সাহস আরেকটু বেড়ে যায় এবং তারপর উনিও লেগে যান মারামারি করতে। শেষমেষ পাড়ার লোকেরা মধ্যস্থতা করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু ততক্ষনে ভাড়াটে ভদ্রলোকটি বাড়িওয়ালার মাথায় জোরে একটা পাথর মেরে ফাটিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন । রক্তারক্তি কারবার। পুলিশ আসার উপক্রম হয়েছিল কিন্তু তার আগেই বাড়িওয়ালা ভাড়াটের কাছে হাত জোর করে মাপ চেয়ে তাকে বাড়িতে যতদিন ইচ্ছে থাকার অনুমতি দিয়ে দেন। জোনাকির পাবলিক রিলেশান ভালো। পাড়ার সব রকম কেচ্ছা কেলেঙ্কারির গল্প চাটনি সহযোগে আমার কাছে পৌঁছে যায়।
এর দু তিন দিন পর
অ বাবু হন্তদন্ত হয়ে হাজির ,
"শুনলাম নাকি তোমার কাছে অমূক আর অমূক বাবু দুজনেই এসেছিলেন ভাগ্য গণনার জন্য"।
মনে মনে বললাম আপনার দৌলতে।
"আর তুমি নাকি দুজনেরই একেবারে সঠিক বিচার করেছ ".
আমি আমতা আমতা করে "ওই আর কি "... বলাতে অমুক বাবু বললেন ,
"আঃ ! আর ভণিতা করতে হবে না। তুমি তো বাড়িওয়ালাকে বলেইছিলে ওঁর প্রাণ নিয়ে টানাটানি আছে আর ভাড়াটেকে বলেছিলে ও যেখানে আছে সেখানেই থাকবে। তাইতো ?"
আমি মাথা চুলকে বললাম , " ওই নিরীহ, শান্তিপ্রিয় মানুষটিকে দেখে বড়ো মায়া লাগছিলো তাই আর কি সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য ওই কথাটা বলেছিলাম। সেটা যে অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাবে তা কী করে জানবো"?
"সে যাই হোক। এখন একটা সাইন বোর্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। তোমার পসার এক্কেবারে কনফার্মড"। "
আমি কিছু বলার আগেই অ বাবু সোৎসাহে হনহন করে বেরিয়ে গেলেন। উনি বয়োঃজ্যেষ্ট এবং আমার সেলফ প্রোক্লেমড গার্জিয়ান। ওনাকে না করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবুও ..
বলা হয়নি এই ট্যারো কার্ডের বান্ডিলটি ওঁর মেয়ে সুমিতারই দেওয়া। শখ করে কিনেছিল কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই শখ ঘুঁচে গিয়ে আমাকে দিয়ে বলেছিল , "দিদি এ আমার দ্বারা হবে না। তোমার ইন্টারেস্ট আছে ; তুমি নিয়ে দ্যাখো "।
এখন ভাবছি ওঁকে বান্ডিলটা ফেরত দিয়ে দেবা।
সাইনবোর্ড লাগার আগে।
এই ট্যারো ফ্যারো আমাকে ও পোষাবে না।