ওই তবেটাই হলো মুশকিল। একবার পেঁয়াজের খোসা ছাড়াতে বসলে আর শেষ নেই।
ছোটো করে বলি ।
এডভোকেট পী কে বাসু সুজাতা মিত্র বলে একটি সুন্দরী মহিলাকে খুনের দায় থেকে বাঁচাতে গিয়ে কেতন দেসাই নামক ব্যবসাদারের পার্টনার কে দোষী সাব্যস্ত করেন। আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। জেলে থাকা কালীন আসামি (নাম ভুলে গেছি) একটি চিঠি লিখে জানান যে তিনি ন্যায়ের সেবা করতে গিয়েই খুনটা করেছেন। অতএব তিনি দোষী নন। যেহেতু কেউ তাকে বিশ্বাস করে না বা করবে না তিনি তাই আত্মহত্যা করাই বেছে নেন । এরপর এই মামলায় যুক্ত সবাই এক এক করে খুন হতে থাকেন। একটি দুর্ঘটনায় পী কে বাসুর কন্যাও মারা যায়।
এদিকে সুজাতা কৌশিক দার্জিলিংয়ের কাছে একটি রিসর্ট খুলবে ঠিক করে। বলা হয়নি কৌশিক সুজাতার কেসে অভিযুক্ত ছিল। কেতন কে মারার জন্য দুটো গুলি চলে। একটি সুজাতার পিস্তল থেকে আরেকটা আততায়ীর আগ্নেয়াস্ত্র থেকে। কৌশিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে সুজাতার হাত থেকে বন্দুকটি নিজের হাতে নিয়ে নেয় যাতে সে দোষী সাব্যস্ত হতে পারে। কিন্ত রাখে হরি মারে কে? কৌশিক আসল খুনী ধরা পড়ায় সসম্মানে ছাড়া পায়।
তারপর প্রেম আরো গাঢ় হয়। আঁঠা হয়ে বিবাহ বন্ধনে সুজাতা কৌশিক আঁট হয়ে যায়। অতঃপর দার্জিলিং - যেখানে কেতন দেসাই মামলার সঙ্গে সপক্ষে বিপক্ষে যারাই যুক্ত তাঁরা সবাই আমন্ত্রিত হয় রিসর্টের লাল ফিতে কাটার জন্য। এই আমন্ত্রিতদের মধ্যে খুনী ও শামিল। এরপর একে একে খুন হতে হতে বেঁচে যাওয়া। এবং শেষ মেষ বাসু বাবুর গোয়েন্দাগিরির সুফল স্বরূপ ঘাতকের ধরা পড়া।
এবার ছাড়াই পেঁয়াজের খোসা ...
সুজাতা কেতন মামলার কথা বলি । সুজাতাকে কেতন নিজের বাংলো তে রাত্রি বেলা ডাকতেই সে কেনো গিয়ে হাজির হলো ?
ভালো মেয়েরা এরকম মাথামোটা কাজ করে ?
আরে নিজের সুরক্ষা তো নিজেকেই ভাবতে হয়। সুজাতা কী ভেবেছিল ? গড়বড় দেখলে গুলি চালিয়ে দেবে। তারপর কৌশিক তো আছেই ?
আচ্ছা তা নয় হলো কিন্তু সুজাতা পিস্তল কোথা থেকে পেলো ? পিস্তলের লাইসেন্স ছিল কি? কৌশিক ওখানে কী করে পৌঁছলো ? ভীষন বেশি কাকতালীয় হয় গেলো নয় কি ?
এবার কোর্ট সীন।
এডভোকেট বাসু জজ সাহেব কে আততায়ীর গতিবিধি সম্বন্ধে অবগত করাতে গিয়ে বললেন " আমার মনে নয় ..." এই ভাবে আর কি খুনটি হয়েছে। "আমার মনে হয়..."? না হয় উচিত "আমার বিশ্বাস..."? সংলাপটি শুনে কানে খোঁচা লাগলো। আরে এডভোকেট সাহাব কানূন সবুত মাংতা হ্যায় "আমার মনে হয়" নেহি।
আসি দার্জিলিংয়ে।
ইন্সপেক্টর রমেন, যিনি সুজাতার কেসে ইনভেস্টিগেশন অফিসার ছিল, এখন দার্জিলিংয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা হোটেলে, যেখানে বাসু বাবু সস্ত্রীক উঠেছেন, এসে হাজির। মামলার পরবর্তী খুনগুলির ইনভেস্টিগেশন ও তাঁর হাতে। কিন্তু ইতিমধ্যে তিনি কেটি নামক এক নাইট ক্লাব সিঙ্গারের প্রেমে হাবু ডুবু খেয়ে পুলিশি কার্যকলাপ ও গতিবিধির কনফিডেনসিয়াল খবরাখবর নির্দ্বিধায় মেয়েটির সামনে ফোনে আলোচনা করে নিজের জীবনাবসানের পথ নিজেই প্রশস্ত করে ফেলেন। কেটি রমেন কে লাখ টাকার বিনিময়ে খুন করে। একজন দুদে পুলিশ অফিসার কী করে প্রেমে এরকম ভাবে ক্যালাতে পারে ?
রিসর্টে আসি।
প্লটটিকে ঘোরালো করার জন্য নানান হাইলি সাস্পিসিয়াস চরিত্রের সুজাতা কৌশিকের রিসর্টে অবতরণ । একজন ডাক্তার আর তার স্ত্রী যার সুজাতা মিত্র কেসের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। একটি কথায় কথায় ধুমপানরতা দারুন স্টাইলিশ মহিলা এবং একটি আর্টিস্ট ছোকরা । একজন বার্কলে ইউনিভার্সিটির শিক্ষক যার বিনা অনুমতিতে যার তার ফোন ক্লিক করে ছবি তোলার শখ।
ডাক্তারের স্ত্রীর আবার সবরকম মনোবৈজ্ঞানিক রোগ আছে - ক্লেপটোম্যানিয়া , ঘুমের ঘোরে চলা মানে সোমনামবুলিসম ইত্যাদি।
তারপরে যা হয়ে থাকে।
বরফ... ঝড়... ফোনের তার কাটা... যোগাযোগ বন্ধ... এর মধ্যে বাসু বাবুর অনুরোধে দার্জিলিঙ পুলিশের এক অফিসার রিসর্টে এসে হাজির খুনী কে ধরার জন্য... ইয়ে মানে বাসু বাবুকে খুনীকে ধরার্থে হেল্প করার জন্য। তিনি এসেই সবাইকে সন্দেহের চোখে দ্যাখা আর জেরা শুরু করা। জেরার ফাঁদে এমন কি বাসু বাবু পর্যন্ত জড়িত।
দারুন সিনসিয়ার পুলিশ.. হুঁ হুঁ ।
এর পরে আর স্পয়লার না দিয়ে একটা ছোট্ট হিন্ট দিয়ে পেঁয়াজের খোশা ছাড়ানো বন্ধ করি। যারা যারা আগাথা কৃষ্টির মাউসট্র্যাপ গল্পটি পড়েছেন তার সঙ্গে কাঁটায় কাঁটায়ের শেষ ক্লাইমেক্সের হুবহু সাদৃশ্য খুঁজে পাবেন। এটা কি কাকতালীয়? অথবা যাকে বলে ইনস্পায়ার্ড? না সম্পূর্ণ ভাবে লিফটেড ?
তবে পুরো সিরিজটা দ্যেখার পর একটাই কথা মনে হয়। এত জল ঘোলা না করে সোজাসুজি কেতন দেসাইয়ের খুনের মামলায় অভিযুক্ত লোকটি কাকে চিঠী বা সুইসাইড নোটটা লিখেছিল সেটার খোঁজ করলেই তো খুনী সহজেই ধরা পড়ে যেত । নয় কি ? কেনো চিঠিটি যাকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছিল তার পরিচয় শুরুতেই পাওয়া গেলো না বা ধরা পড়ল না সেটা বোধগম্য হলো না তো।
হ্যাঁ তবে এত সহজেই খুনী ধরা পড়লে গল্পের গরু গাছে উঠতে পারত না তা ঠিক ।