এই গল্পটি প্রথমে ফেবুতে তারপর স্টোরি মিরর ডট কমে এখন এখানে প্রকাশিত হলো....
আমার গল্প লিখতে খুব ভালো লাগে। ছোট গল্প। বিশেষ করে ভুতের গল্প। আমার রোমান্স ফোমান্সে ক্রিয়েটিভ স্যাটিস্ফ্যাকশন ঠিক আসে না। এই সময় খুক খুক করে কে যেন গলা খাঁকারি দিল। আমি তাতে কান দিলাম না। বললাম, এই নয় যে আমি ভৌতিক বা অলৌকিক জগতের কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ পেয়েছি। কিন্তু যা দেখা যায় না বা অনুভব করা যায় না তা কি একেবারেই ইহলোকে এক্সিস্ট করে না এটা কি কেউ হলপ করে বলতে পারে? তাছাড়া ভুত যে সব সময় খারাপই হতে হবে এর কোনো মানে নেই। ভালো, পরোপকারী ভুত ও হতেই পারে। নানা ধরনের মানুষ থাকতে পারে নানা ধরনের ভুত হতে পারে না?
কথা হচ্ছিল কলকাতা রাজধানীর এ সি ফার্স্ট ক্লাস কুপে তে বসে একজন বয়সী সহযাত্রীর সাথে। কাঁচা পাকা চুল, ছোটখাটো, পাতলা গড়ন, দুধে আলতায় গায়ের রং। ভদ্রলোকের চেহারার মধ্যে বেশ একটা পড়াশোনা জানা আভিজাত্যের ছাপ স্পষ্ট। আমাদের সঙ্গে আছেন আরো দুজন - মা ও মেয়ে। তারা চুপটি করে আমাদের কথা গিলছে আর একে অন্যকে দেখছে।
যার সঙ্গে কথা হচ্ছে উনি অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে একাগ্র চিত্তে আমার কথা শুনছেন আর মাথা নেড়ে সম্মতি জানাচ্ছেন। আমার ওনার এই অসম্ভব মন দিয়ে কথা শোনাটা খুব ভালো লাগছে। তাই হয়তো অনর্গল বকছি। নিজেকে থামাতে পারছি না। সাধারণতঃ আমার বাড়িতে কেউ আমাকে বিশেষ পাত্তা দেয় না। আমিও দিই না।
একাই যাচ্ছি কলকাতায় পিসিমনির সঙ্গে দেখা করতে। অনেক বছর পর। দেখি সময় পেলে কলকাতার বাইরে কিছু মফস্বল জায়গা ঘুরে দেখার ইচ্ছা আছে। শুনেছি এখনও অনেক এমন জায়গা আছে যেখানে নির্জনতার কোলে নানান রকম অভিজ্ঞতা হয় যা বুদ্ধি বা লজিকের বাইরে। লোকালয় আর জনবহুল মেট্রো শহরে তেমন ঘটনা বিরল। ভদ্রলোক আবার মাথা নাড়লেন।
রাতের খাবার পর বাথরুমে যাওয়ার জন্য উঠলাম। ঠায় বসে গেঁজিয়েছি। ফিরতে দেরি হলো কারণ বাথরুমের সামনে বেশ কিছু লোক অপেক্ষমান ছিল। ফিরে দেখি মা ও মেয়ে বেডিং পাততে ব্যস্ত। আমার বেডিংটা বোধহয় অ্যাটেনডেন্ট টান টান করে পেতে দিয়ে গেছে। সিনিয়র সিটিজেন হওয়ার অনেক অ্যাডভান্টেজ আছে।
কিন্তু সেই নিপাট ভালো মানুষটি কোথায়? বোধহয় উনিও বাথরুমের লাইনে আটকা পড়েছেন। শুতে যাবো - শুনলাম মা মেয়েকে বলছে বুড়ো বয়সে এরকম ভিমরতি অনেকের হয়। তোর রাঙাদিদার কথা মনে নেই? আপন মনে বক বক করতো? তবে এদের একলা বাড়ি থেকে বেরোতে দেওয়া উচিৎ নয়। কখন কি হয়ে যায়!
সকালে উঠে ও ভদ্রলোকটি কে কুপেতে পেলাম না। হয় তো মাঝ রাতে মোগল সরাই বা অন্য কোনো স্টেশনে নেমে গেছেন। ওনার সম্বন্ধে বিশেষ কিছুই জানা হয়নি। নিজের কথা বলতে এত ব্যস্ত ছিলাম। এখন খারাপ লাগছে। আহা কি সমবেদনশীল মানুষ ...সচরাচর দেখা যায় না।
কলকাতা থেকে ফিরেছি। দুদিন পর এক নাম করা পাবলিশার-এর চিঠি পেলাম। তারা আমার ছোট গল্প গুলো পাবলিশ করতে চায়। কোথায় পড়লো আমার ছোট গল্প জানিনা। তবে সেরা ভৌতিক গল্পের সিরিজে আমার লেখা স্থান পাবে বলেছে। মোটা একটি রকমের চেক ও পাঠিয়েছে চিঠির সঙ্গে।
বললাম না নানা রকমের মানুষ যেমন, তেমন নানা রকম ভুত ও তো আছে। আমার সহযাত্রীকে কথায় কথায় আফসোস করেছিলাম যে আজ অবধি আমার গল্প কোথাও ছাপা হয়নি। তখন হয়তো কোনো ভালো ভুত আশে পাশে ঘাপটি মেরে বসেছিল। আমার দুঃখের কথা শুনে....
আরে কি মুশকিল! বিশ্বাস হচ্ছে না? কেনো সত্যজিৎ বাবুর গুপ গাইন বাঘা বাইন দেখেন নি?
Copyright @ Geetashree Chatterjee