এরকম একটা ব্লগ টাইটেল দেখে ঘাবড়াবেন না। টাইটেল টার যথাযথ একটা কারণ আছে। সৃজিত বাবুর ওয়েব সিরিজ "রবীন্দ্রনাথ কখনো এখানে খেতে আসেননি" যারা দেখেছেন তারা বুঝবেন । যারা দেখেননি তারা ভাগ্যবান। আমি গোগ্রাসে গিলেছি কারণ শুরুটা থ্রিলার মার্কা ছিল। তার উপর রাহুল বোস অ্যাজ সিবিআই অফিসার চোখের তৃষ্ণা মেটাচ্ছিল। নয়ন সুখ আর কি !! আমার এই বুড়ো বয়সেও। তবে কি জানেন সৌন্দর্য্যের অ্যাপ্রিসিয়েশন বয়স মানেনা। এখানে পৌরুষ শব্দটা বেশি প্রযোজ্য। অনির্বাণ অ্যাজ্ আতর আলি মাৎ করে দিয়েছে।
গল্পে আসি? এখন কথা হলো গল্পের গরু গাছে চড়ে তবে আপনি লেখক হিসেবে গরুকে যদি মগ ডালে পা ঝুলিয়ে বসিয়ে দ্যান তাহলে গুল্প আর গল্পে বেশি ফারাক থাকে না।
নিরুপম চন্দ মহাকাল পত্রিকার সাংবাদিক, সুন্দরপুর নামক পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার বর্ডারের কাছাকাছি স্থিত শহরতলীতে (?) একটি হোটেলের প্রচুর নামডাক শুনে খেতে আসেন। ক্রমশঃ প্রকাশ্যমান তিনি খাবারের চাইতে বেশী ইন্টারেস্টেড খাবার রাঁধুনি (মহিলা শেফ) ও হোটেলের মালকিন সম্বন্ধে যার চারপাশে জড়িয়ে আছে নানান গুজব ফ্রম রক্ত পিশাচিনী টু ডাকসাইটে ওয়েল কানেকটেড রহস্যময়ী নারী । মহিলাটি আবার দারুন রবীন্দ্র সংগীত অনুরাগী এবং যখন তখন, বিশেষ করে মাঝ রাত্রে, স্থান কাল পাত্র বিবেচনা না করে, "আয়েগা আনেওয়ালা" স্টাইলে সিচুয়েশন অনুযায়ী গান (রাবীন্দ্রিক ন্যাচারালি) গাইতে শুরু করেন। এমন কি মৃত দেহ গোর দিতে দিতে ও!! বুঝতেই পারছেন দা গরু ইজ ক্লাইম্বিং আপ দা ট্রী।
এখানে বলা বাহুল্য এই হোটেলে কিছু মাসের মধ্যে কয়েক জন যুবক খেতে এসে নিরুদ্দেশ হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন বাংলাদেশের মন্ত্রীর ভাগ্নে না ভাইপো ঠিক মনে নেই - মানে একজন কেউকেটা। স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের পশ্চিম বঙ্গ সরকার এই রহস্য উদ্ঘাটন করতে উদগ্রীব। কিন্তু যেই মহিলা আন্ডার দা স্ক্যানার তাঁকে সচরাচর পাবলিকে দেখা যায় না। শুধু তাঁর আতিথ্য গ্রহণ করতে গন্যমান্য ব্যক্তিরা গাড়ি করে আসা যাওয়া করেন। বুঝতেই পারছেন ব্যাপার স্যাপার ''হাইলি সাস্পিশিয়াস''।
এর পর আরো চমকপ্রদ কিছু তথ্য সামনে আসে যেমন নিরুপম চন্দ ইজ নট এ সাংবাদিক বাট এ সিবিআই অফিসার যেটা অ্যাকচুয়ালি প্রথম থেকেই যারা ভারতীয় (মানে হিন্দি, বাংলা ইত্যাদি) ছবির পোকা তাদের বুঝতে মোটেই অসুবিধা হবে না। আমি তো আবার সাব টাইটল পড়ে পড়ে ইংরেজি সিনেমাও দেখি। আমার তো কথাই নেই।
গল্পটির লেখক (মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন) কি খেয়ে গল্পটি লিখছিলেন জানিনা। আমার ও পার বাংলার সৃজনীশীল মানুষদের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা আছে। সৃজিত বাবু ওয়েব সিরিজ করতে গিয়ে গল্পটিকে অবলম্বন করেছেন মাত্র। আমার বিশ্বাস এতে ওনার নিজস্ব মাল মশলা মানে ইন্টারপ্রিটেশন ও বহুত থাকতে পারে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই গল্পটা না পড়ে লেখকের প্রতি কোনো মন্তব্য করা সমিচীন নয়। অতএব স্পিক টি নট।
মানুষ যে সবচেয়ে স্বার্থপর ও মানসিক স্তরে অসুস্থ জীব এটাই বোধহয় এই গল্পের মূল ভিত। মনে আছে এই বাস্তব সত্যটির উপর লেখা শ্রী তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি ছোট গল্প আমাদের পাঠ্য পুস্তকের অংশ ছিল। তবে সেই গল্পের কাঠামো অন্য, বক্তব্যের মিল থাকলেও মানসিক স্তরের অসুস্থ্যতাটা মূল্যায়নের বাইরে ছিল, ভাষার সৌন্দর্য ও শালীনতা গল্পের সারকে আরো মর্মান্তিক করে তুলেছিল।
সৃজিতের ওয়েব সিরিজের মূল্যায়ন আমার স্বল্প ক্ষমতার বাইরে। এই গল্পের (খল) নায়িকা পরিস্থিতির শিকার না জন্মগত ডাইনির ডি এন এ আক্রান্ত বলা মুশকিল। তবে তার স্ক্রীন প্রেসেন্সের শট গুলি অত্যধিক ঝাপসা ও অতীব লাল রঙের ব্যবহার রক্তাক্ত কারবারের ইন্ডিকেশান না সাসপেন্স ক্রিয়েশনের ফর্মুলা না অন্য কিছু আমার বোধগম্যর বাইরে। হয়তো আমার এই বিষয়ে কিছু লেখাই উচিত নয় কারণ সিনেমাটিক ল্যাঙ্গুয়েজের বা ভাষার উপর আমার কোনোই দখল নেই। আমি লিখছি একজন লে-পার্সন বা ভিউয়ার হিসেবে। আমার আফসোস একটাই এই ঝাপসা লালের মাঝে নায়িকার মানে মুস্কান ঝুবেরি চরিত্রের জামদানির কালেকশান ও কিছু-না-পড়লেও-চলত ব্লাউজ গুলো ভালো ভাবে দেখতে পেলাম না। আবার সেই ঝাপসালোকেই একটা সায়েন্স ল্যাবরেটরির মতন কিচেনে মহিলা রাবীন্দ্রিক অঙ্গে গান গেয়ে গেয়ে মাথার ঘিলু ফ্রাই করে চলেছেন - ওই মানে কোনো নতুন ডিশের এক্সপেরিমেন্ট করছেন ..... না অন্য কিছু?
তবে পিশাচিনীর সেন্স অফ এথিক্স আর ই আর মানে এমপ্লয়ী রিলেশন যেকোনো কর্পোরেট কে হার মানাতে পারে। যারা ওঁর ওয়াফাদার তাঁদের মন প্রাণ ধন দিয়ে বাঁচানোর প্রচেষ্টা খুবই টাচিং !
শেষের দিকের এপিসোড গুলোর শুরুতে দেওয়া ডিসক্লেমার - নিজের হৃৎপিণ্ড সামলে পরের দৃশ্যগুলো দেখবেন কারণ সে গুলো অসম্ভব রকম ভয়াবহ - আমার মত কঞ্জেনিটালি ভিতু লোককেও ভয়ার্ত করতে অসমর্থ হলো কারণ এগেন সৃজিত বাবুর আধো আলো আধো আঁধারিতে কিস্যুই বোঝা গেলো না শুধু সংলাপই গল্পের দড়ি টানলো এবং গোটা ব্যাপারটা বোঝা গেলেও একটু অতি মাত্রায় ওই সীন গুলোকে টেনে লম্বা করে ভয়ের চাইতে বোরিং বেশী করে ফেললেন নির্দেশক। আবার বলবো স্ক্রিনপ্লে অত্যন্ত প্রেডিকটেবল। এবং আলো আঁধারির এস্থেটিক্স বুঝতে গিয়ে চোখের মণির ব্যথা বাড়লো।
কিন্তু সিবিআই সাহেবের টেম্পোরারি স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়াটা কি নিতান্তই প্রয়োজন ছিল? সেই মাল্টি স্টোরিড বিল্ডিংয়ের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে চিল চিৎকার ? পিশাচিনীর সম্মুখীন হয়ে চেয়ারে বসে ব্রেক ডান্স ? সৃজিৎদা এ কি করলা ? আমাগো হি ম্যানরে এত্ত আনডিগনিফাইড পস্চার গুলিতে না দেখালে কী চলত না ? এখানে কিছু লিগ্যাল প্রশ্ন ও উঠে আসে। বাঘ কে সে কেন ছাগ শিশু শীকার করে খায় এই নিয়ে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায় কি? তেমনি ভ্যাম্পায়ারের উপরে কি কেস করা যায়? এই দ্যাহেন কথায় কথায় একটা স্পয়লার দিয়া দিলুম। কিসু মনে করবেন না য্যান।
সৃজিত বাবুর সব সময় বড় বড় আর্টিস্ট নিয়ে কারবার। অঞ্জন দত্ত কে আমার ভালো লাগে - তাঁর কিছু কিছু গান, পারফরম্যান্স, স্ক্রীন প্রেসেন্স, গলার আওয়াজ। অনেক বছর আগে ওকে সামনাসামনি দেখেছি। মেক আপ করা মুখ। চোখের তলায় ব্যাগস। এখন বয়স হয়েছে ভদ্রলোকের। হয়তো সেই কারণেই ব্যাগ গুলো আরো প্রমিনেন্ট হয়ে প্রায় ঝুলে পড়েছে। মনে হচ্ছিল চশমার তলা থেকে বেরিয়ে আসবে। এ ব্যাপারে কি কিছুই করা যায় না ? উনি পাবলিক ফিগার। চেহারায় চাকচিক্য না হোক অ্যাট লিস্ট স্বাস্থ্য সম্বন্ধে একটু সতর্ক ও সচেতন হওয়া কি যায় না অঞ্জনদা?
সমীক্ষান্তে বলি এ পার হোক কি ও পার হোক পুলিশ যে কতখানি অপদার্থ তা সর্ব সমক্ষে আবার তুলে ধরার জন্য থ্যাংকু লেখক ও নির্দেশককে।
আর সর্বান্তে ভালো করেছেন কবিবর এই রসনাগারে চরণ ধুলি দেননি। যদি দিতেন তাহলে ওনার লেখা তিন হাজার গানগুলো কে লিখতো? আর অজস্র কবিতা, চিঠি , ছবি, গল্পো, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নৃত্য নাট্য, গীতি নাট্য আরো কত কি? তাই ভাগ্যিস!!