আমার জীবনে কিছু দুক্কু বরফের ড্যালার মতো জমা পড়ে আছে। আজ সেগুলির একটা লিস্টি তৈরী করব ঠিক করেছি :
দুক্কু নম্বর ১
এটা আমার ছোটবেলার দুক্কু
আমাকে কেউ গান গাইতে বললে আমার স্মৃতি শক্তি ও গলার আওয়াজ দুই ই লোপ পায়। "কী গাব আমি কী শোনাবো ..." ছাড়া আর কোনো গান আমার মনে পড়ে না। অথচ আমার চিরকালের স্বপ্ন আর ডি বর্মন 'আমাগো বাসার' সামনের রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে হারমোনিয়ামে আমার সা - রে - গা - মা - পা - ধা - নি - সা রেওয়াজ শুনে বাড়ীর কলিং বেল বাজিয়ে আমায় কোলে তুলে নিয়ে একেবারে বোম্বে পাড়ি দেবে। কিন্তু হলো না ..
দুক্কু নম্বর ২
ইটা আমার মেয়েবেলার দুক্কু
কত মেয়েরা কী সুন্দর ভাবে টান -টান করে মডেলের মতন শাড়ি পড়ে , মেক আপ করে , মিষ্টি দেখায় ...আমি শত চেষ্টা করেও পারি নিকো। ঠোঁটে লিপিস্টিক মাখলে কালো কালো ছোপ পড়ে। চোখে কাজল আঁকলে চোখের তলায় কালি আরো প্রবল গাঢ় দেখায়। ফাউন্ডেশনের গন্ধ আমার সহ্য হয় না - মাথা ধরে...গা ঘিন ঘিন করে তাই এই দুক্কুটাও রয়ে গেলো গো ...
দুক্কু নম্বর ৩
এটা আমার ধিরে ধিরে গড়ে ওঠা দুক্কু
ছোটবেলায় আমি ভীষণ লাজুক ছিলাম। কেউ কোনো বাজে কথা বললেও তার উত্তর দিতে পারতাম না - খুব খারাপ লাগতো। দিনের পর দিন সেই বিষ মাখা কথাগুলো মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেত। আর আমি উত্তর না দিতে পেরে মনে মনে গুমরাতাম। তারপর উত্তর দিতে শিখলাম, রাগ করতে শিখলাম, রাগ দেখাতে শিখলাম এবং শেষ-মেষ রাগে ফেটে পড়তে শিখলাম। ক্রোধ শনি ... কে না জানে? রাগের চোটে মাঝে মধ্যেই মাথা দপদপাতে শুরু করতে লাগলো . তখন রাগ কমাবার পন্থা গুলো অবলম্বন করতে শুরু করলাম। পুরোপুরি ক্রোধ সম্বরণ করতে না পারলেও ভিসুভিয়াস হই না আর বা হতে হতে থেমে যাই. কিন্তু আমার দুক্কু হলো কিছু কিছু লোক দেখি কী সুন্দর রাগ চেপে রেখে মিষ্টি মিষ্টি করে পিচিয়ে পিচিয়ে কথা শোনাতে পারে তারপর কী অমোঘ কৌশলে ঝোপ বুঝে কোপটি মারে। আমি কেন তা পারিনা ? একদম পারিনা।
দুক্কু নম্বর ৪
এটা আমার মানে এক্কেবারে এক্সেপশনাল দুক্কু
আমি অহেতুক এবং অনিয়ন্ত্রিত অন্তরঙ্গতা বা ভাবপ্রবণতা হ্যান্ডেল করতে পারি না। টু মাচ ইমোশন একেবারে নো নো। মানে ওই ভাবের ফানুশ হয়ে গলে গলে - ও:! এটা আমার দু:খ না অক্ষমতা ঠিক বলা কঠিন। মানে আমাকে যদি কেউ প্রেম নিবেদন করে - ভাগ্যিস কোনোদিন কেউ করে নি - আমার যে কী প্রতিক্রিয়া হবে বা হতো বলা মুস্কিল। একবার এক পাড়ার ছেলে রাস্তায় আমাকে ,"আপনাকে অনেক কথা বলার আছে কিন্তু কেমন করে বলি বুঝতে পারছি না। .." বলাতে আমি " তাহলে আর বলে কাজ নেই " বলে হনহনিয়ে চলে গেছিলাম।
দুক্কু নম্বর ৫
এটা আমার বড়বেলার দুক্কু
আমি অনেক লেটে গাড়ী চালাতে শিখি। তার ও বেশ কিছু বছর পরে গাড়ী কিনি। যতদিনে গাড়ী কেনার মুরোদ হলো ততদিনে গাড়ি চালানো ভুলে গেছি আর কি। তারপর আবার শিখলাম। দু বার ই ড্রাইভিং স্কুলের গাড়ীতে। ও গাড়ীতে কেউ চালানো শিখতে পারে না। কারণ কন্ট্রোল থাকে পাশে বসে থাকা ড্রাইভারের কাছে। তাই আবার শিখলাম - এবার নিজের গাড়ীতে। তিন মাসের ট্রেনিং ছ মাসে গড়ালো। যিনি শেখাতেন তিনি টেনশনে টেনশনে বিড়ি ফুঁকে ফুঁকে গাড়ীতে বিড়ির এমন গন্ধ করে ফেললেন যে গাড়ীতে বসা দায়। এক হরিয়ানার ড্রাইভার আমাকে শেখাতে এসে রেগে-মেগে বলেছিলো ,"ম্যাডাম আপনি সব জানেন কিন্তু রাস্তায় বেরিয়ে কিছুই করেন না" - ম্যাডাম করবেন কী করে ম্যাডাম তো রাস্তায় নেবে ভয়ের চোটে বোধশক্তিরহিত হয়ে যান । আজকালকার ছোট্ট ছোট্ট মেয়েদের দেখি ততোধিক ছোট্ট ছোট্ট জামা পড়ে বিশাল গাড়ী নিয়ে ভোঁ ভোঁ করে চালিয়ে যাচ্ছে। দেখে হিংসে হয়।
দুক্কু নম্বর ৬
এটা আমার বুড়োবেলার দুক্কু
এই দুক্কু এমন দুক্কু "বোঝে কে আন জনে সজনি আমি বুঝি মরেছি মনে মনে " - না কাব্যি করার কিছু নেই। তবে এটা ঠিক যে এই দুক্কু নিয়েই আমি গত হব। আমি কনজেনিটালি ওভারওয়েট। ছোট্টবেলায় আমায় কেউ কোলে নিতে পারতো না। এখানে ছবি দিতে পারতাম - থাক। স্কুল ও কলেজ এবং পরবর্তি চাকুরী জীবনে আমি তন্বি হিসেবে খ্যাত ছিলাম। তিরিশ পেরিয়ে সেই যে খেতাব হারালাম এখন ওইয়িং মেশিনে পা রাখতে ভয় হয় যদি ভেঙে যায় - লজ্জা . লজ্জা। তবে একবার ডায়েট করে ১৫ কিলো ওজন কমিয়ে ছিলাম। পাড়া প্রতিবেশীরা চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করতো , "তুমি কী অসুস্থ ?" তারপর শরীর এমন খারাপ হলো - গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট বললেন "ডায়েট করে কাম নাই। নর্মাল খাবারে ফিরে আসেন"। আর আমি সেই যে ফিরলাম আর যাওয়া নাই। তবে আমার এজেন্ডা না খেয়ে মরার নয় - . আমি খেয়ে বাঁচতে এবং মরতে চাই. - আই হোপ ভগাদা আমার এই ইচ্ছে টুকুর মান রাখবেন।
যাক অনেক দুক্কের কথা ঢাক পিটিয়ে বললাম .
তবে এটা জরুরি ছিল নয়তো আমার ববম হাজামের মতো অবস্থা হচ্ছিলো। পেট ফুলে ঢোল।
বয়সটাও এমন .. হঠাৎ করে টেঁসে গেলে ভ্রাম্যমান পেত্নী হয়ে "কাকে বলি...কাকে বলি " করতে করতে মর্তলোকে ঘুরে বেড়াব আর যার তার কানে ফিসফিসাব।
তাই আর কি লিখে রেখে গেলুম
হালুম এন্ড হুলুম।