Saturday, February 07, 2015

চান্দ মামার টি আর সুয্যি জ্যাঠার ডী


একান্নবর্তী পরিবার। মা হেঁসেল ঠেলতে সদাই ব্যস্ত। ছোটোবেলায় তাই আমু (ঠাম্মা) পিসীদের কাছেই মানুষ। ম’নে পড়ে আমু সুর করে ছড়া কেটে পীঠে আলতো করে থপথপিয়ে ঘুম পারাতেন...“আয় আয় চাঁদ মামা মিষ্টি মেয়ের কপালে টি দিয়ে যা...” আর বড় পিসী বলতেন রসিয়ে-রসিয়ে গল্প – রামায়ণ, মহাভারত আরো কত কী। গ্রীষ্মের দুপুরে হ’ক বা শীতের রাত্রে – ছড়া আর গল্পের মহড়া অবিরাম চলত। তার আর থামতি নেই। আমার বোধহয় গল্প শোনা ও বলার নেশা সেখান থেকেই শুরু।

 

বড় হওয়ার অনেক জ্বালা। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় জ্বালা ছোটোবেলার সেই সরল, নিষ্পাপ দিনগুলো হারানোর। জীবনের পাঁচ দশক পেরিয়ে এখন চাঁদ মামার শীতল স্নেহের চাইতে সুয্যি মামার তপ্ত হাতের পরশের বেশী পরিমাণ প্রয়োজন। ঠীকই ধরেছেন। বয়সের প্রকোপ শরীরের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে বেশ বোঝা যাচ্ছে। হাঁটুর ব্যাথা, সার্ভাইক্যাল, গোড়ালিতে হাড় বেড়ে যাওয়া - সবই এই পৄথিবীর ভার বাড়ানোর সাজা আর কী?

 

ডাক্তারবাবু গম্ভীর মুখে বলেন, “দেহে তো একবারে কিছু নেই। ভিটামিন ডীর বিশেষ দরকার। সকালে উঠে সূর্য প্রণাম শুরু কর”। আমি আঁতকে বলি, “সকালে যে অনেক কাজ। তার উপর আবার সূর্য দেবতার জন্য আলাদা সময় বার করা যে বড়ই মুশকিল। ডাক্তার আরো বিরক্ত মুখ করে ক’ন, “তা না হলে ভোগো”।

 

কাঁচুমাচু মুখ করে ভাবি, “গেল যা। আবার এক নতুন বিপদ। সকালে উঠে সূর্য দেবতার আরাধনা কর”। ভাবি আমু থাকলে ছড়ার কথাগুলো একটু পালটে নিয়ে হয়ত বলতেন, “তোর আর হক্কাল হক্কাল পার্কে গিয়া কাম নাই। আমি তেনারে তুষ্ট করার পন্থা জানি”। আর তারপরই বোধহয় সুর কেটে ছড়া গাইতেন,” আয়, আয় সুয্যি জ্যাঠা মিষ্টি মেয়ের হাড়গুলায় ভিটামিন ডী দিয়ে যা”।