Friday, November 01, 2024

পরিণীতা উইথ এ টুইস্ট

প্রথমতঃ আমি তোমাকে চাই....

না: হলো না।

প্রথমতঃ বাঙালিদের এই পিছনে পানে চেয়ে থাকা কবে যে শেষ হবে কেউ কি তা বলতে পারে ?

এই কিছু বছর অন্তর অন্তর সেই এক  প্রেমের কেচ্ছা !

এবার ওয়েব সিরিজ !

শরৎ বাবু সগ্য থেকে দেখতে দেখতে স্মিত হাসি হাসছেন আর গুনগুনাচ্ছেন, "তুম মুঝে ইয়ুন ভুলা না পাওগে... এ... এ"

হত্যি কি ?

না নিয়তির পরিহাস জানিয়া কপালে করাঘাত করিতেছেন ?

("এ যে দৃশ্য দেখি অন্য... এ যে জঘন্য.. ")

"এ্যাই এ্যাই! হেইডা তো আমি এমনে লিখি নাই! তুই ক্যাডা আমার শেখরের মুখে গান গুজনেওয়ালা ?"

শরৎ বাবুর এই ২০২৪ এর শরৎ কালের নিশার নির্মল আকাশে ভিরমি খাইবার কারণ একটাই - হইচই তে ব্যতিক্রমী পরিণীতা  !!!

শেখর ও ললিতার আফটার ব্রেকআপ রেলওয়ে স্টেশনে দ্যাখা।

তার আগে শেখরের প্ল্যাটফর্মে ধুতির কোঁচা সামলাতে সামলাতে "তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা " অত্যন্ত সুরেলা গলায় গাওয়া।

হুঁ হুঁ মোটেও লাগতাসিল না ললিতার জইন্য মন হু হা করতাসে। কার লাইগ্যা গাইতাসিলে গো? 

বিষন্ন প্রেমিক রোমান্টিক গান গাইবে না করুন রসে রসগোল্লার মতন হাবু ডুবু গান গাইবে গা ? 

সো প্রথমতঃ চয়েস অফ সংগ রংগ 

স্টেশন মাস্টার হিন্দুস্থানী। তার আবার খাইয়া দাইয়া কাম নাই শেখরের পিসনে ঘুর ঘুর ঘুর ঘুর। দ্দুত!!!

আবার পাকামী করে শেখর কে জানানা ওয়েটিং রুমের তালা খুলে বসানো।

কি না বর্ষার দিনে কেউ নাকি রেল যাত্রা করবে না। ভদ্রলোক ভুলে গেছেন এখন গ্লোবালাইজেশনের যুগে লোকে সাইক্লোনেও আইসল্যান্ড যাত্রা করে।

গল্পের গরু গাছে ভালো ভাবে চড়ছে.... চড়ুক।

ট্রেন এ্যাজ ইউজুয়াল লেট। কখন আসবে জানা নেই।

শেখর স্টেশনের বাইরে তেলে ভাজা খাচ্ছে। 

স্বদেশী গান শুনছে ।

এমন সময় ললিতার প্রবেশ .... এ্যা ক কে বা রে এ্য ক কা।

তারপর আর কি ? 

বাম্প ইন্টু ইচ আদার...

তার পর অনেক গুলো ফ্ল্যাশ ব্যাক...

যার মধ্যে ললিতার স্বদেশীদের প্রতি সফ্ট কর্নার ,  গিরীন কে ইমপ্রেস করতে অতুলপ্রসাদী গাওয়া, শেখরের সঙ্গে মালা বদল ইনক্লুডেড।

দ্বিতীয়ত: আমি তোমাকে একদম চাই না । 

হু ইজ দিস ললিতা? 

আমি না , হেই প্রশ্নটা লেখক স্বয়ং জিগাইতাসে। হ্যায়ে ও নিজের হিরোইন রে চিনতে পার্তাসে না। 

কি দুঃখ! কি দুঃখ!

এগেইন দ্বিতীয়ত লেখক ইজ হিমসেলফ কনফুজিয়াছেন যে এহেন পরিণীতা তিনি কোন সালে পুঁথিগত করিয়াছিলেন

তবে অদিতি রায় নাম্নী নির্দেশিকা তুরুপের টেক্কা জোর সে টেবিলে মারলেন যখন ক্লাইম্যাক্স এ আমাগো শেখর কনফেসালো যে সে ভীতু বলিয়াই ললিতার সঙ্গে প্রেম ও গান্ধর্ব মতে বিবাহ কে পাপী সমাজের সামনে হৃদয় চীরকে বোল নেহি সেকা।

এই মারাত্মক কনফেসানের পর শরৎ বাবু সত্যিই ভিরমি খাকে মাটি মে গির কে ধড়ফড় কর কে চিল্লানে লাগা , " না ! না! এ হতে পারে না। এ হতে দেব না। আমার মেল চৌভিনিস্ট হিরো গুলার ইগো গুলাকে তছনছ কইরো না । শেখর তুমি স্লোগান ছাড় 

এ লড়াই বাঁচার লড়াই
এ লড়াই জিততে হবে... এ... এ... এ ..."

স্বর্গের সিঁড়ি ভেদ করে ব্যথায় বিধুর এক লেখকের বিদীর্ণ বক্ষ চীর করা কর্ণভেদী আর্তনাদ নির্দেশিকার কর্ণে... নো প্রবেশ করলো নি কো।

এবং এই বিদ্রোহী নোটে মানে অন দিস রেভলিউশনারী নোট পরিণীতার যবনিকা পতন ঘটিল।

তৃতীয়ত ... না: আর গেলাম না

এই রিভিউটির একমদ্বিতীয়ম পজিটিভ আসপেক্ট যে এই হৃদয় বিদারক , সো কল্ড আধুনিক ইন্টারপ্রিটেশন যুক্ত সিরিজ টি বাড়িতে বসে দুপুরে অর্ধ ঘুম ও অর্ধ জাগরিত অবস্থায় ট্যাকের পয়সা খরচ না করিয়া দেখিয়াছি। এবং ইহার জন্য আমার কোনো ক্রেডিট প্রাপ্য নহে কারণ যে নিজেকে দুঃখ দিয়ে আনন্দ পায় তার ভাগ্যে এমন যাতনা অনিবার্য।

প্লীজ এক্সকিউজ মী....




Tuesday, September 17, 2024

মিতিনের সঙ্গে এক সন্ধ্যা




মাত্র সুয্যি মামা অস্ত গেছেন। কলিং বেলের টুং টাং আওয়াজ। ভাবছি এখন কে? 

হর বিলাশ দরজা খুলছে শব্দ পেলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘরে একগাল হাসি নিয়ে আমাদের মিতিনের প্রবেশ। ঘর সন্ধ্যের ছায়ায় ঝিম মেরে ছিল। এবার আলোকিত হলো। 

"আরে! কি ব্যাপার মিতিন যে।" 

মিতিন আমাদের পাড়ার মেয়ে। সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি। ভারি চৌকস। যেমন পড়াশোনায় তেমনি খেলাধুলায়। আবার ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ন ও। ব্ল্যাক বেল্ট। ওকে সেই ছোট্ট থেকে দেখছি। আমার আদরের মিতিন। এখন আবার গোয়েন্দাগিরিতে নেবেছে । মিতিন যে কিছু ভিন্নধর্মী কাজ করবে আমি আগে থেকেই জানি। তাই আশ্চর্য হইনি। ওযে এক্কেবারে অন্যধরনের মেয়ে।

এক ভাঁড় রসগোল্লা খাবার টেবিলে রাখতে রাখতে মিতিন বললে, " কেসটা সলভ হলো পিসী।"

এটা এখন একটা নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে গেছে। কোনো কেস সলভ করার পর মিতিনের মিষ্টি নিয়ে আসা। তারপর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কেস নিয়ে আলোচনা। কি ভাবে ও কেসটা সলভ করলো। কি কি করলে আরো সহজ ও কম সময়ে কেসটা সলভ হতো। এই সব। আমার চাকুরি জীবনের কিছু কিছু অভিজ্ঞতা ওঁর সঙ্গে শেয়ার করি যাতে ওঁর পরবর্তি কেসে কাজে লাগে। 

"বুঝলে পিসী, এবার ছিল এক ব্ল্যাকমেইলের কেস। সুন্দরী মেয়ের বয়স্ক ধনী স্বামী। নতুন বিয়ে হয়েছে। মাত্র কিছু মাস। তারপরেই অজ্ঞাত এক পুরুষের ভর দুপুরে মেয়েটিকে ফোন। তাঁর বিবাহের পূর্বের কেচ্ছা ফাঁস করার হুমকি। টাকা না দিলে চুপ হবে না সে। তারপর সেই মেয়ে মৃত শ্বাশুড়ির গয়না বিক্রি করে টাকা যোগায় ব্ল্যাকমেলারকে । এতে ওকে সাহায্য করে তার পূর্ব প্রেমিক। কিন্তু ব্যাপারটা কেঁচে গেলো যখন সেই প্রেমিক ব্ল্যাকমেইলারের পরিচয় পেলো। প্রেমিকাকে সে কে জানানোর আগেই প্রেমিক খুন। তারপর কেস আমার হাতে। প্রেমিকার স্বামীই আমার দ্বারস্থ হন ভীত স্ত্রীর কাছ থেকে সব জেনে।"

শুনে আমি স্তম্ভিত, "বলো কি? এযে উপন্যাসের ও বাড়া।"

"তবে? বলছি কি?" বলল মিতিন।

এরপরের বিষদ আলোচনা আর লিখছি না। 

সুচিত্রা ভটটাচার্য দেবি মিতিনের এই কেসটাকে পুঁথি গত করেছেন।

পড়ে দেখুন "পালাবার পথ নেই"।

রূপই কি মেয়েদের সব চেয়ে দামী অলঙ্কার ? 

না সুশিক্ষা?

কুকর্মের ফল কি এই জীবনেই পাওয়া যায় ?

সব হিসাব কি এই জন্মেই শোধ হয় ?

আর লিখছি না।

বাকিটা সুচিত্রা দেবির কাহিনীতে প্রকাশ্যমান ।



 

Saturday, August 24, 2024

শিকড়

এদেশীয়দের "আমরা পূর্ব বঙ্গের" বললেই মুখের ভাব বদলে যায়। হয়তো বাড়ির কাজের মাসি বা ঝুগ্গি ঝোপড়িতে থাকা কুলাঙ্গার গুলির কথা মনে পড়ে যায়। এদেশীয়দের পূর্ব বঙ্গীয়দের সম্বন্ধে এত টুকুই জ্ঞ্যান বা  পরিচিতি।

দু:খের বিষয়। কিন্তু এই নিয়ে কোনো জাতিকে অবমাননা করবো না। কারণ আমরা সবাই  কুপমণ্ডুক। নিজেদের সামাজিক গন্ডির বাইরে কত টুকুই বা জানি বা খোঁজ রাখি ? 

বলাই বাহুল্য বেশি কিছু বলেও লাভ নেই। বললেও কি বলব? আমাদের সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের পাশে বিরাট বসত বাড়ি ছিল? শান্ত পুকুর ঘিরে অনেক খানি জমির উপর বাগান -  ছায়া ভরা গাছগুলির  প্রতিচ্ছবি পুকুরের জলে স্থির হয়ে থাকতো? আর সেই যে বাগানের গেটের উপর কামিনী ফুলের চাঁদোয়া? ফুল ঝরে পড়ত গেটের বাইরে রোয়াকে। 

কত লোক যাতায়াতের পথে সেই রোয়াকে বসে জিরিয়ে নিত। তাঁদেরই মতন আর এসে বসত একটি মেয়ে। সদ্য বিবাহিতা। স্বামী ও শ্বাশুড়ির হাতে নির্যাতিতা। প্রায়ই দ্যাখা যেতো তাঁকে এলো চুলে মন্দিরের পিছনে নদী পারের ঘাটলায় উদাস নেত্রে বসে থাকতে। তখনও সে বিশ্ববন্দনীয়া হননি। 

একদিন তিনি এসে বসেছেন আমাদের বাড়ির  রোয়াকে। দাদু বাগানে পায়চারি করতে করতে লাল পেড়ে সাদা শাড়ি পড়া অল্পবয়সী মেয়েটিকে দেখে বললেন, "বাইরে কেন মা? ভিতরে এসে বসো।" মেয়েটি মাথা নোয়ালেন। না তিনি ভিতরে আসবেন না। ততক্ষণে দিদিমা বাইরে এসে পড়েছেন। বললেন , " লজ্জা কিসের মা? তুমি তো আমার মেয়ের মতন।" মেয়েটি নত শীরে উত্তর দিলেন, " মা, আমি ঘরে পা দেব না। তবে আপনি আমায় মেয়ে বলে ডেকেছেন, আজ থেকে আপনাদের মা আর  বাবা বলেই জানবো।" 

সেদিন থেকে ওই পাতানো কন্যাটির সঙ্গে এ বাড়ির রক্তের চেয়েও প্রগাঢ় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমার এক মাসির সঙ্গে ছিল তার সহদরার মতন ভাব। 

এরপর অনেক বছর কেটে গেছে । সাধনার অনেক উচ্চ স্থানে পৌঁছে ও রাজনৈতিক পরিপৃষ্ঠতা পেয়েও তিনি বৈরাগীই রয়ে গেছিলেন। দিল্লীতে শতেক শিষ্য গণ দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে কখনো এসেছেন। আমার মা ছুটে গেছেন তাঁকে দেখতে। হাজার খানেক লোকের লাইন অবজ্ঞা করে শুধু মাত্র বলে পাঠিয়েছেন : " রাজশাহী থেকে রাজমোহন বাবুর ছোট মেয়ে এসেছেন দ্যাখা করতে।" অমনি ডাক পড়েছে । 

শিশু সুলভ আনন্দে ভরে উঠেছেন। পরিবারের প্রত্যেকের নাম নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খবরাখবর নিয়েছেন। মার হাতে তুলে দিয়েছেন আশির্বাদ স্বরূপ কখনো কিছু কখনো কিছু।

খুব ইচ্ছে ছিল সেই মন্দির দ্যাখার। সেই পুকুর পাড়। সেই বসত বাড়ি। সেই কামিনী গাছের ছায়ায় মোড়া রোয়াক খানি। হয়তো বিধ্বংসী বন্থিশিখা জ্বলার আগেই ছারখার হয়ে গেছে সেই সব স্মৃতিচিহ্নগুলি ।

হয়তো সেই বাড়ি আর নেই। নেই সেই পুকুর। কামিনী গাছের ছায়া ঘেরা রোয়াক । কিন্তু মন্দির?  মন্দির তো ছিল নাম করা। অনেক ভক্তগণের আরাধ্যা দেবীর ঝলমলে আসন। 

ভগবান কে কি হত্যা করা যায় ?  

জ্বালিয়ে নাশ করা যায় ? 

ইতিহাসের মতন মুছে ফেলা যায় ? 

নতুন ইতিহাস গড়ার আগে কি সেই অবিনশ্বরকে একবার ডাক দেবে না সময়?

" হে পরমেশ্বর চেয়ে দ্যাখো তোমার স্মৃতি সৌধ মুছে ফেলে নতুন ধর্মের আবাহন করছি আমরা অমৃতস্য পুত্রা:।"

"আশির্বাদ কর আমরা যাতে সফলকাম হই!"





Tuesday, July 23, 2024

হঠাৎ ..... কাল্পনিক!!



গতকাল সন্ধ্যাবেলায় সুচিত্রা ভট্টাচার্যের একটি উপন্যাস পড়তে পড়তে তন্দ্রা মতন এসে গেছিল। 

হঠাৎ মোবাইলটা বেজে ওঠাতে জেগে গেলাম। 

অচেনা নম্বর। 

কলটা রিফ্লেক্স একশনের মতন রিসিভ করতেই অপর প্রান্তে এক আগন্তুকের স্বর। প্রথমে বুঝতে পারিনি। কথাগুলো জড়ানো জড়ানো। আমি প্রশ্নসূচক উত্তর দেওয়াতে সেই অজানা ব্যক্তি এবার স্পষ্ট ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলো :

"আর ইউ ইন ইন্টেলিজেন্স বিউরো?"

ভদ্রলোকের কথায় বেশ টান আছে। হয় বাঙালি নয় মাদ্রাজী। মাদ্রাজী মানে তেলুগু, তামিল, কন্নড়, মালিয়ালী  - যা কিছু।

আমি না করাতে অপর প্রান্তের ফোনকারী জোর দিয়ে বলল: 

"আই অ্যাম কনফার্মড দ্যাট ইউ ওয়র্ক ফর ইন্টেলিজেন্স বিউরো।"

আমিও ততোধিক জোর দিয়ে বললাম:

"ওয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট?"

জোরটা হয়তো বেশি হয়ে গেছিল। 

আমার প্রশ্নের উত্তরে টক করে লাইনটা কেটে গেলো।

বুকটা ছাৎ করে উঠলো। 

এই অপরিচিত লোকটা কেমন করে জানলো আমার গুপ্ত ইচ্ছার কথা ? 

আমি যে এককালে সী বী আই, সতর্কতা বিভাগ বা এমনি কোনো একটি অনুসন্ধানমূলক দপ্তরে কাজ করতে উদগ্রীব ছিলাম ?

আর স্পাই হওয়া মানে তো একটা দারুন রোমহর্ষক ব্যাপার - নয় কি?

কিন্তু সেই চাকুরিটি হতে হতে হলোনা। 

যিনি আমাকে অফার করেছিলেন তাঁকে অতীব উৎসাহের সঙ্গে উত্তরে বলেছিলাম, "হ্যাঁ স্যার, একবার সুযোগ দিন । সব কটাকে দেখে নেবো।"

ভদ্রলোক মৃদু হেঁসেছিলেন মাত্র। 

তারপর থোর বড়ি খাঁড়া আর খাঁড়া বড়ি থোর। 

যে তিমিরে সেই তিমিরেই রয়ে গেলাম।

ফোনটা বন্ধ করে অনেক ভাবলাম।

কে এই ভদ্রলোক যার আমার ইন্টেলিজেন্স বিউরোতে কাজ করা নিয়ে এত চিন্তা?

আমাকে না হয় ভুল করে ফোন করেছিল কিন্তু সত্যি যার চাকুরি নিয়ে এত দুশ্চিন্তা সে কে?

আর কেনই বা এত দুশ্চিন্তা ?

এই একটি কিছুক্ষণের ফোনচারিতায় আমার হৃদয়ের শুপ্ত বাসনাগুলো আবার  পট পট করে জেগে উঠল।

ভদ্রলোক কোথায় আঘাত করেছেন জানেন কি?

আবার ফোন।

এবার চেনা কন্ঠ স্বর।

আমার স্কুলের বান্ধবী।

ওকে কিছুক্ষণ আগের ফোনের কথাটা বলাতেই কিছু সাবধান বাণী কর্ণপটে গলগল করে পড়ল :

"আজকাল বহুত ফ্রড কল হচ্ছে। তুই জানিস?"

কিছু দুর্ঘটনার বিবরণ....

তারপর

"কোনো আননোন নাম্বার তুলবিই না।" 

গেলো।

দ্বিতীয়বার কাল্পনিক বা কিয়ৎক্ষণের জন্যই হোক আমার জীবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয়, সবচেয়ে লোভনীয় চাকুরিটা ফেল্টু মেরে গেলো।

অনেকদিন পর বুড়ো বয়সে হাত পা ছুঁড়ে ভেউ ভেউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করলো।

দূরে কোথাও এফএমে বেজে উঠল :

"পাগলা ...আ...আ ...মনটারে তুই বাঁধ... ধ....ধ...., কেন রে তুই ...ই ...ই ... যেথা সেথা পড়িস প্রাণের ফাঁদ ...দ ...দ ...দ "

খুউব দরদে গলা।

পারলাম না।

ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে ডুকরে ডুকরে কেঁদে ফেললাম।

এখন মনটা হালকা লাগছে।

ভাবছি ভদ্রলোককে পাল্টা ফোন করি ।

"ইয়েস আই ওয়ার্ক ইন ইন্টেলিজেন্স বিউরো। ওয়াট ইজ ইওর প্রবলেম ? মে আই নো?"

আমার কল লগে ওই নাম্বারটা এখনো আছে।

ডিলিট করিনি।

একবার ট্রাই করবো নাকি?

কি বলেন?


Saturday, April 20, 2024

হাঁটি হাঁটি পা পা

যখন ছোট ছিলাম মা ও বাবু নিশ্চয়ই হাত ধরে হাঁটা শিখিয়েছিল। স্মৃতি শক্তি সেই সব অবোধ দিন গুলো মনে করতে পারে না।

শাঠ বৎসর পর আবার হাঁটছি। হাঁটা শিখছি। ব্যাপারটা যে এত কষ্ট ও শ্রম সাধ্য হবে জানা ছিল না।

গাঁটে গাঁটে ব্যথা। কাল মন্দির অবধি, যা আধ কিলোমিটারের ও কম দূরত্বে, অনেক কষ্টে পৌঁছলাম। প্রথমে পুরোনো জুতো তৎপর নতুন জুতো পড়ে ঠিক করলাম মনের ভয় কে জয় করতেই হবে - পাড়ি দিলাম।

পুজো করতে গিয়ে ভগবানের চাইতে জুতো তে নজর বেশি ছিল। মন্দিরে জুতো চুরি, তায় এক্কেবারে বাক্স থেকে সদ্য বার করা, আকছার হয়ে থাকে।

ফেরার পথে থেমে থেমে আকাশ বাতাস দেখতে দেখতে বাড়ি ফেরত।

জীবনের শেষ ধাপ দেখছি, অনুভব করছি। ব্যথা, বেদনা, ক্লান্তি, বাড়ি থেকে বেরোতে অনীহা। আলসেমি। তবু ও বেঁচে আছি।

বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা এখনো যায়নি।

তাই আবার হাঁটতে শিখছি।

হাঁটি হাঁটি পা পা।

Friday, April 19, 2024

ভবিষ্যৎ বাণী







আমার প্রতিবেশিনীর সঙ্গে কথা বলতে বলতে জানতে পারলাম তাঁর সুন্দরী, শিক্ষিতা কন্যাটি আবার ট্যারো জানে। ঝুলে পড়লাম। আমার ভবিষ্যৎ টাও দেখে দিক। রিটায়ারমেন্টের পর পয়সা কড়ির অভাব হবে না তো ?

বেশ কিছু দিন এর পর কেটে গিয়েছে। ওঁর মার কথা মত এগারো টাকা টোকেন মানি ও পাঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু মেয়েটির সময়াভাবে... সঠিক মানসিক প্রস্তুতি... এনার্জি লেভেল... ইত্যাদি আর হয়ে উঠছে না। 

অতএব নো ভাগ্য গণনা।

তার বেশ কিছুদিন বাদে হঠাৎ এক সন্ধ্যায় ফোন। মেয়েটির মা বললে আমার সঙ্গে মেয়েটি কথা বলতে চায়। মানে ওই আর কি - ভাগ্যান্বেষণের সুসময় আগত। 

আমি রোমাঞ্চিত, দুরু দুরু বক্ষে কথপোকথন শুরু করলাম। 

প্রথমেই মেয়েটি আমাকে প্রশ্ন করল আমি কোনো নতুন কাজ করতে আরম্ভ করেছি কিনা ।

আমি  নকারাত্মক উত্তর দিতে সে বললে অদূর ভবিষ্যতে সে সম্ভাবনা নাকি দৃশ্যমান।

আমি যাইপরনাস্তি খুশিত।

কিন্তু তারপরেই একটি অগ্নিশেলে দাহত হলাম।

মেয়েটি বলল, " আন্টি, যার সঙ্গে তুমি কাজে নামবে তাঁর সঙ্গে তোমার রোমান্সের যোগ দেখতে পাচ্ছি। আমি বার বার দেখেছি। কার্ডসগুলো তাই বলছে।"

আমার মাথায় হাত।

জিগালাম, "আমার বয়স জানো তো?। ষাটের ঘরে পা দিয়েছি।"

মেয়েটি আধুনিক ভাবধারায় আমায় সান্ত্বনা দেয় , "বয়সটা শুধু একটা নম্বর মাত্র।"

আমি অন্য দিকে কথা ঘোরাই।

কারণ আমি জানি বয়সটা শুধু মাত্র নাম্বার নয়। বয়সের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ছ দশকের কটু অভিজ্ঞ্যতা, রক্ষনশীল মানসিকতা, নানা প্রকারের ইনহিবিশান, সামাজিক ও পারিবারিক দায়বদ্ধতা, শারীরিক জড়তা। 
যারা ঘাড় ঝাঁকিয়ে বলে বয়সটা কিছু না তারা অন্ধ। 

এই বেতো ঘোড়া কোনোদিনই রেসের মাঠে নামবে না।

সেই মানসিক দৃঢ়তা আমার নেই।

...

এই ঘটনার পর প্রায় অনেক রাত নানা বিধ রোম্যান্টিক স্বপ্ন দেখেছি যা আমার পরবর্তি গল্পের খোরাক হতে পারে।

তাতে বাধা নেই।

...

Wednesday, February 14, 2024

বীণাপাণি পুস্তকহস্তে দেবি নমস্তে

আজ সরস্বতী পুজো। 
বেশি কিছু লিখছি না।
শুধু কয়েকটা ছবি আপলোড করছি।

সকাল সাড়ে দশটায় বেরোলাম অঞ্জলি দিতে। নিবেদিতা এনক্লেভ কালি বাড়ি।
পৌঁছতে পৌঁছতে এগারোটা।
শুধু চা খেয়েছি আটটা নাগাদ।
উপোষী বলা চলে।
মা শুভ্রবসনা। কিন্তু প্যান্ডেলের ছাত লাল। তাই রোদের আলো লাল হয়ে গিয়ে সব ছবি লালছোঁয়া হয়ে গেছে।

মাকে একলা পাওয়া যাচ্ছিল না। অঞ্জলীর দল। মা মাসীর দল। তারই মাঝে একবার ঝপ করে ক্লিক করলাম।

মা মাসীদের পার্টিসিপেশন বেশি। বাচ্চাদের, পড়ুয়াদের দর্শন বিরল। 

এবার একটু নতুন ডেকরেশনের ছোঁয়া। মন্দির দ্বারের দু ধারে দুই বিবর্ণ পড়ুয়া বর্ন পরিচয় হাতে।
বিদ্যাসাগর মশাইকে অনেকদিন পর সশ্রদ্ধ নমনে।মনটা মজা পেল । হ্যাপি হলো।

শুধু খবর কাগজ দিয়ে তৈরি। অভিনবত্ব আছে।

বাড়ি এসে দিদির হাতের খিচুড়ি আর চাটনি খেয়ে মন  তৃপ্তি পেল।

তারপর  লম্বা ঘুম ।