Saturday, April 20, 2024

হাঁটি হাঁটি পা পা

যখন ছোট ছিলাম মা ও বাবু নিশ্চয়ই হাত ধরে হাঁটা শিখিয়েছিল। স্মৃতি শক্তি সেই সব অবোধ দিন গুলো মনে করতে পারে না।

শাঠ বৎসর পর আবার হাঁটছি। হাঁটা শিখছি। ব্যাপারটা যে এত কষ্ট ও শ্রম সাধ্য হবে জানা ছিল না।

গাঁটে গাঁটে ব্যথা। কাল মন্দির অবধি, যা আধ কিলোমিটারের ও কম দূরত্বে, অনেক কষ্টে পৌঁছলাম। প্রথমে পুরোনো জুতো তৎপর নতুন জুতো পড়ে ঠিক করলাম মনের ভয় কে জয় করতেই হবে - পাড়ি দিলাম।

পুজো করতে গিয়ে ভগবানের চাইতে জুতো তে নজর বেশি ছিল। মন্দিরে জুতো চুরি, তায় এক্কেবারে বাক্স থেকে সদ্য বার করা, আকছার হয়ে থাকে।

ফেরার পথে থেমে থেমে আকাশ বাতাস দেখতে দেখতে বাড়ি ফেরত।

জীবনের শেষ ধাপ দেখছি, অনুভব করছি। ব্যথা, বেদনা, ক্লান্তি, বাড়ি থেকে বেরোতে অনীহা। আলসেমি। তবু ও বেঁচে আছি।

বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা এখনো যায়নি।

তাই আবার হাঁটতে শিখছি।

হাঁটি হাঁটি পা পা।

Friday, April 19, 2024

ভবিষ্যৎ বাণী







আমার প্রতিবেশিনীর সঙ্গে কথা বলতে বলতে জানতে পারলাম তাঁর সুন্দরী, শিক্ষিতা কন্যাটি আবার ট্যারো জানে। ঝুলে পড়লাম। আমার ভবিষ্যৎ টাও দেখে দিক। রিটায়ারমেন্টের পর পয়সা কড়ির অভাব হবে না তো ?

বেশ কিছু দিন এর পর কেটে গিয়েছে। ওঁর মার কথা মত এগারো টাকা টোকেন মানি ও পাঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু মেয়েটির সময়াভাবে... সঠিক মানসিক প্রস্তুতি... এনার্জি লেভেল... ইত্যাদি আর হয়ে উঠছে না। 

অতএব নো ভাগ্য গণনা।

তার বেশ কিছুদিন বাদে হঠাৎ এক সন্ধ্যায় ফোন। মেয়েটির মা বললে আমার সঙ্গে মেয়েটি কথা বলতে চায়। মানে ওই আর কি - ভাগ্যান্বেষণের সুসময় আগত। 

আমি রোমাঞ্চিত, দুরু দুরু বক্ষে কথপোকথন শুরু করলাম। 

প্রথমেই মেয়েটি আমাকে প্রশ্ন করল আমি কোনো নতুন কাজ করতে আরম্ভ করেছি কিনা ।

আমি  নকারাত্মক উত্তর দিতে সে বললে অদূর ভবিষ্যতে সে সম্ভাবনা নাকি দৃশ্যমান।

আমি যাইপরনাস্তি খুশিত।

কিন্তু তারপরেই একটি অগ্নিশেলে দাহত হলাম।

মেয়েটি বলল, " আন্টি, যার সঙ্গে তুমি কাজে নামবে তাঁর সঙ্গে তোমার রোমান্সের যোগ দেখতে পাচ্ছি। আমি বার বার দেখেছি। কার্ডসগুলো তাই বলছে।"

আমার মাথায় হাত।

জিগালাম, "আমার বয়স জানো তো?। ষাটের ঘরে পা দিয়েছি।"

মেয়েটি আধুনিক ভাবধারায় আমায় সান্ত্বনা দেয় , "বয়সটা শুধু একটা নম্বর মাত্র।"

আমি অন্য দিকে কথা ঘোরাই।

কারণ আমি জানি বয়সটা শুধু মাত্র নাম্বার নয়। বয়সের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ছ দশকের কটু অভিজ্ঞ্যতা, রক্ষনশীল মানসিকতা, নানা প্রকারের ইনহিবিশান, সামাজিক ও পারিবারিক দায়বদ্ধতা, শারীরিক জড়তা। 
যারা ঘাড় ঝাঁকিয়ে বলে বয়সটা কিছু না তারা অন্ধ। 

এই বেতো ঘোড়া কোনোদিনই রেসের মাঠে নামবে না।

সেই মানসিক দৃঢ়তা আমার নেই।

...

এই ঘটনার পর প্রায় অনেক রাত নানা বিধ রোম্যান্টিক স্বপ্ন দেখেছি যা আমার পরবর্তি গল্পের খোরাক হতে পারে।

তাতে বাধা নেই।

...

Wednesday, February 14, 2024

বীণাপাণি পুস্তকহস্তে দেবি নমস্তে

আজ সরস্বতী পুজো। 
বেশি কিছু লিখছি না।
শুধু কয়েকটা ছবি আপলোড করছি।

সকাল সাড়ে দশটায় বেরোলাম অঞ্জলি দিতে। নিবেদিতা এনক্লেভ কালি বাড়ি।
পৌঁছতে পৌঁছতে এগারোটা।
শুধু চা খেয়েছি আটটা নাগাদ।
উপোষী বলা চলে।
মা শুভ্রবসনা। কিন্তু প্যান্ডেলের ছাত লাল। তাই রোদের আলো লাল হয়ে গিয়ে সব ছবি লালছোঁয়া হয়ে গেছে।

মাকে একলা পাওয়া যাচ্ছিল না। অঞ্জলীর দল। মা মাসীর দল। তারই মাঝে একবার ঝপ করে ক্লিক করলাম।

মা মাসীদের পার্টিসিপেশন বেশি। বাচ্চাদের, পড়ুয়াদের দর্শন বিরল। 

এবার একটু নতুন ডেকরেশনের ছোঁয়া। মন্দির দ্বারের দু ধারে দুই বিবর্ণ পড়ুয়া বর্ন পরিচয় হাতে।
বিদ্যাসাগর মশাইকে অনেকদিন পর সশ্রদ্ধ নমনে।মনটা মজা পেল । হ্যাপি হলো।

শুধু খবর কাগজ দিয়ে তৈরি। অভিনবত্ব আছে।

বাড়ি এসে দিদির হাতের খিচুড়ি আর চাটনি খেয়ে মন  তৃপ্তি পেল।

তারপর  লম্বা ঘুম । 

Monday, February 12, 2024

সিলুয়েট

সেকালে কোনো ফ্যান্সি ক্যামেরা ছিল না।  ছিল না দামী মোবাইল।  নিত্য নতুন টেকনোলজির চল হয়নি।  সেই সময় আমার পিশেমশাইকে সাদামাটা ক্যামেরায়ই  দারুন অ্যাঙ্গেলে সাদা কালো ছবি তুলতে দেখেছি। অ্যালবাম ভর্তি। পিশেমশাইয়ের ছিল ঘোরার শখ আর ছবি তোলার।  ওঁর তোলা ছবি আমার কাছে খুব কম আছে। তাই ওনার কৃতি তুলে ধরতে পারলাম না।

আমাদের পরিবারে আর এক গুণী ব্যক্তিত্ব ছিলেন আমার সেজো মামা। তিনি খুব ভালো তবলা বাজাতেন তাই আমার মামাতো মাসতুতো ভাই বোনেরা ওনাকে ধিন মামা বলে ডাকতো। মা ডাকতেন দাদামনি বলে। তাই আমি আর দিদিও ওঁকে দাদমনি বলে ডাকতাম। দাদামনি যেকোনো গান শুনে ঝটপট হারমোনিয়ামে তুলে ফেলতে পারতেন। উনি ভালো খেলোয়াড় ও ছিলেন - ব্যাডমিন্টন, তাস, ক্যারাম ইত্যাদি। কিন্তু সবচেয়ে জবরদস্ত ছিল ওনার গল্প বলার টেকনিক -  যাকে আজকালকার দিনে বলে আর্ট অফ্ স্টোরিটেলিং। 

উনি আমাদের বাড়ি আসলেই ওনাকে আমরা ছেঁকে ধরতাম গল্প শোনানোর জন্য। ওনার মুখেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক লেখক লেখিকাদের গল্প শোনার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। হয়তো ওনার কাছ থেকেই গল্প শুনতে শুনতে গল্প লেখার বা বলার নেশা অজান্তেই আমায় বশ করেছিল । ফ্রেঞ্চ লেখক মোপাসার লেখা প্রচুর ছোট গল্প ওনার মুখেই শোনা। গল্পের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর জায়গাটিতে উনি ইচ্ছে করে ব্রেক নিতেন আমাদের উত্তেজনা ও গল্পের সেই মোড়টির পরে কি হবে জানার প্রবল ইচ্ছেটিকে প্রবলতর করার জন্য। সিগারেটে একটি সুখটান দিতে দিতে ফরমায়েশ করতেন এক কাপ চায়ের। যতক্ষণ চা না আসত ততক্ষণ গল্পে বিরতি আর সেই মুহুর্তে আমাদের উদগ্রীবতা চরম পর্যায়ে পরিণত হতো । সে কি এক্সাইটমেন্ট! আধুনিক যুগে পী ভী আর, ইউ টিউব, ও টি টি তে অভ্যস্ত বাচ্চাদের অবশ্য আমাদের কেবল প্রাচীন রেডিও ব্যতীত অন্য কোনো মনোরঞ্জন  ও এক্সপোজারের মাধ্যম না থাকার দরুন কথকের সামনে বসে রসিয়ে রসিয়ে তাঁর গল্প বলা ও আমাদের মুখ হা করে শোনার তাগিদ কল্পনা করা কঠিন।

দাদামনির আরেকটি হবি ছিল ফটোগ্রাফি। 

তখনকার দিনে ভালো ফটোগ্রাফি কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। ছবি তুলতে গেলে ঠিক সময়, পর্যাপ্ত আলো, সঠিক অ্যাঙ্গেল ইত্যাদির খেয়াল রাখতে হতো। সেকেলে ক্যামেরার লেন্স অ্যাডজাস্টমেন্ট করাই ছিল বিরাট কসরত।

দাদামনির তোলা মা এবং মাসীর (দুজনেরই বিবাহের পূর্বে) এই ছবিটি আমার খুব প্রিয়। বাবা বলতেন এটা সিলুয়েট। খুব কঠিন ফটোগ্রাফি। এখানে ওনার কৃতি তুলে ধরলাম আপনাদের জন্য।

তবে দু:খের বিষয় পিসেমশাই ও দাদামনি দুজনেরই ব্যক্তিগত জীবন সুখের ছিল না। সে গল্প আরেকদিন।


ছবিটি একটি পুরোনো পারিবারিক অ্যালবাম থেকে নেওয়া। মেইনটেন্যান্স নেই তাই নষ্ট হতে চলেছে। কেমন ভাবে ছবিটিকে বাঁচিয়ে রাখা যায় ভাবছি। আপনাদের কোনো পদ্ধতি জানা থাকলে নিশ্চই কমেন্টে লিখে জানাবেন।

শুভ রাত্রি।

Tuesday, January 23, 2024

বসে আছি পথ চেয়ে

চুপচাপ ।

বাইরে প্রচন্ড ঠান্ডা।

কুয়াশায় ঘেরা।

ধোঁয়াটে।

কাঁচের জানালাটা মাঝে মাঝে জলের ধারায় ভিজে যাচ্ছে। যেন বৃষ্টির ধারা ঝরে পড়ছে। আসলে কুয়াশা জলের ধারায় পরিণত হচ্ছে । আর কিছুই নয়।

এইরকম আবহাওয়ায় হিটারের সামনে বসে ভুতের গল্প বা রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাস বা টিভিতে এরকম ধরনের সিনেমা বা সিরিজ দেখার মরশুম।

কিন্তু কিছুই করছি না।

পায়ের মোজাটা ভিজে ভিজে লাগছে।

কেন?

আমি তো জলে যাইনি।

তবে?

ঝুঁকে দেখি একরাশ রক্ত।

পায়ের তলার দিকটা।

মোজা ভিজে গেছে।

না কোনো রক্তাক্ত খুনের সীনে পায়ের ছাপ ফেলে ( জুতো ছাড়া ?) আসিনি।

কাউকে রাগের বসে নিশুতি রাতে ঝোপ বুঝে কোপ মারিনি।

তবে?

চিল ব্লেন...

কনকনে ঠান্ডায় পায়ের আঙুলগুলি ফুলে চুলকুনি হয়। চুলকে চুলকে ফেটে রক্ত বেরোয়। 

তারেই কয় চিল ব্লেন ।

ওই আর কি!

এই হাঁড় কাঁপানো জানুয়ারি মাসের শীতে বাড়িতে আটকে থেকে একটা রোমহর্ষক পরিস্থিতির সুচনা করলাম।

আর কি!!!🤪🤪

 

এখন একটু খানি রোদের ঝলক দেখা গেছে।

দেখা যাক কতক্ষন থাকে।

ঠান্ডা কমে কিনা।

তার সঙ্গে চিল ব্লেন । 🤞🤞


#বাংলাব্লগ #আজকেরডায়েরি #শীত #রক্তাক্তব্যাপার #রোমহর্ষক