Saturday, December 06, 2025

সেলিব্রিটি না হওয়ার দুঃখ থুরি লাভ

আমার এককালে ইয়ে মানে সেলিব্রিটি হওয়ার বড় সাধ ছিল। মানে  ওই " আমার বড় আহ্লাদ ..." টাইপের ফিলিং। কিন্তু জীবনের ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করতে করতে সেলিব্রিটি না হওয়ার দুঃখর অনুপাতে লাভের  অংশ অনেক বেশি রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুভব করলাম। এই বিশাল উপলব্ধির কিয়দাংশ এখানে তুলে ধরছি। আমার বিশ্বাস আপনারা নিজ-নিজ বৌদ্ধিক বিচার দিয়ে পরখ করে এই অনুভূতিগুলির মধ্যে হয়তো কিছু কিছু লুফে নিতেও পারেন।

সেলিব্রিটি হওয়ার শতেক দুঃখের কয়েকটা -


(১) রাস্তার ধারে খোলা নালার ঠিক গা ঘেঁষে দাঁড়ানো ফুচকাওয়ালার কাছ থেকে ফুচকা চেয়ে চেয়ে খেতে পারবেন না । ফুচকার তেঁতুল গোলা জল হাত বেয়ে গড়িয়ে পড়লে চেটে এই অমৃত সমান পেয় যাতে ওয়েস্ট না হয় সেটা রোধ করতে পারবেন না ।

(২) মেট্রোর ভিড়ে গাদাগাদি হয়ে শহরের পরিবহনের ফেলিং সিস্টেমের 'মা বহন কী' মানে শুদ্ধ বাংলায় যাকে বলে নিন্দা করতে করতে বাড়ি থেকে আপিস ও আপিস থেকে  বাড়ি করতে পারবেন না। 

(৩) ভিড়ে জর্জরিত হয়ে ঘর্মাক্ত কলেবরে বাসে, লোকাল ট্রেনে, মেট্রোতে (ভিড়ে হ্যাদানো এ সি তে), বুড়ো থুত্থুরে ট্রামে ঘটর ঘটর করে আসতে যেতে পার্শ্ববর্তী যাত্রীর মোবাইলের কথপোকথনের মাধ্যমে তাঁর/তাঁর এক্সটেন্ডেড ফ্যামিলির/মায় প্রতিবেশীর প্রাইভেট লাইফের রসালো খুঁটিনাটি কান লাগিয়ে শুনতে পারবেন না। ইন ফ্যাক্ট, কান লাগানোর প্রয়োজন ও নেই এমনিই লাউড স্পিকারের ঘোষণার মত শোনা যায়। এর চাইতে হেব্বি মনোরঞ্জনকারী লাইভ সিরিয়াল আর আছে কি ?

(৪) শহরের অলিতে গলিতে বেজার বেকার ঘুরতে ঘুরতে ভুল করে সুলভ শৌচালয় ঢুকে পড়ে ইয়া লম্বা জিভ কেটে সরি বলে ছিটকে বেরিয়ে আসতে পারবেন না। 

(৫) কোনো মিটিং মিছিলে টাইম পাস করার জন্যে "চলবে চলবে না" বলে ভাগ নিতে পারবেন না ।

(৬) পাবলিক ফাংশনে কেউ আপনাকে সম্মানীয় অতিথি বা বিচারক হিসেবে নিমন্ত্রণ জানাবে না বা হঠাৎ দু লাইন বলার জন্য অনুরোধ করবে না। আপনার যদি আমার মত পাবলিক স্পিকিংয়ের ভয় থাকে তাহলে এই না বলার আনন্দ যে কি অপরিসীম সেটা আর লিখে বাতলাতে হবে না। 

(৭) ছুটির দিনে (আমার ক্ষেত্রে প্রতিদিনই) শতেক বার ধোয়া রং উঠে যাওয়া টি শার্ট ও পাজামা, ছেঁড়া মোজা বা চারটে ফুঁটোওয়ালা সোয়েটার (শীতের দিনে) পড়ে রাস্তায় বেরোলে প্যাপারাজির ছিছিকার বা আপনার অসামান্য স্টাইল স্টেটমেন্টের উচ্চৈরবে প্রশংসা শুনতে/পড়তে হবে না ।

(৮) আধ ঘুমে কোনোরকমে বাড়ি থেকে টলতে টলতে বেরিয়ে গলির মোড়ে অমুকদার দোকানে দুধ, ডিম, পাউরুটি, ম্যাগীর প্যাকেট কিনতে পারবেন না। আধ খানা ডিম ফাটা বেরোলে তা নিয়ে তুমুল দামাল ও সরকার কে গালাগাল দিয়ে মনের/পেটের/মুন্ডুর/আত্মার ক্ষার মেটাতে পারবেন না।

(৯) আপনার জীবনের প্রতিনিয়ত হাগা/মোতা/হাঁচা/কাঁশা/হাই তোলা/প্রেম করা/ডেটিংয়ে ফেল্টু মারা/রোজ চান করেন কিনা নিয়ে কারও কোনো মাথা ব্যাথা থাকবে না।

(১০) আপনাকে পাবলিক রিকগনিশনের জন্য পোলোরের পর পোলোর মেক আপ চাপানোর দরকার হবে না । বিছানা থেকে ঘুম চোখে দরজা খুললেই পাশের বাড়ির সব জানতা মাসিমা "কি ঘুম হলো?" বলে হেঁসে গুড মর্নিং জানাবে।

ইন শর্ট, আপনার জীবন আপনারই থাকবে। ভিড়ে হারিয়ে যাওয়ার অপার স্বাধীনতা থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন না। আপনার জীবনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়কে মশলা মাখিয়ে কুরুচিকর করে কেউ বিক্রি করবে না। আর রাতে পেট ভরে রুটি মাংশ/মাছ ভাত খেয়ে নাকে সরষের তেল দিয়ে ঘুমোতে পারবেন।

এবার বলুন এই পোস্টটির ক্যাপশনটা সার্থক কিনা।

No comments:

Post a Comment