Thursday, October 01, 2015

উফ্!!!




উফ্!!!




উফ্!!!
 
এই শব্দটা ভোলার যো নেই…বিশেষ করে আজকাল কার যুগে যেখানে  অসহিষ্ণুতা মানুষের জীবনধারায় অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত …।
 
ভোর চারটা …
 
এ্যালার্ম ঘড়ীটা বিচ্ছিরী ভাবে কঁকিয়ে উঠল...
হাথ বাড়িয়ে বন্ধ করতে করতে আরো কয়েক সেকেন্ড...ততক্ষণে কোঁকানোটা মরা কান্নার পর্যায় পৌঁছিয়েচে...
 
ঠান্ডা মাথায় খূন করি ......... না মানুষ নয় ... এ্যালার্ম ঘড়ীটার... সোজা......... গলা টিপে।
 
পাশ ফিরে শুই ... আর কিছুক্ষণ আলসেমির আনন্দ নিই আর কী।
 
ঘড়ীর কাঁটা থামে না কিন্তু ... টিক্... টিক্... টিক্... টিক্... টিক্... টিক্
 
তাতে কী? ভুলে যাই সময় কাল পাত্র এক নিমেষে... তারপর ............খেই হারানো নৌকার মতন উথাল পাথাল সমুদ্রের পাড়ি...
 
চোখ খুলতেই চরক্ গাছ ... উফ্ দেরি হয়ে গেছে ... ভীষণ...!!!
 
দৌড়ে লাগুর পাই না... (এমারজেন্সিত মাটির ভাষাটা বড়ই মিঠে, সহজ, প্রাণের ভাষা লাগে...!!)
বাথরুমের দর্শন ....ঢোকা আর বেরোনো আর কি!!
 
হোঁচোট খেলাম... আউচ!!!
 
তারপর রান্নাঘর............মাঝে মাঝে আজীবন কারাবাসের মতন লাগে।। কিন্তু হিন্দীতে ওই যে বলে “পাপী পেট কা সওয়াল হ্যায় বচ্চা” ওই আর কি!!
 
চাটা বেশী কড়া হয়ে গেল... উফ্!
ডালটায় নূন এক চামুচের জায়গায় দুই চামুচ পড়ে গেল...  উফ্!
উচ্ছের তরকারি কড়াইয়ে লেগে গেল... উফ্!
দুধ উথলে ফ্লোর ভাসালো ... উফ্!
কাজের লোক আছে...কিন্তু আজ না বলে ছুটি করে ফেলল না বেল বাজিয়ে উত্তর না পেয়ে চলে গেছে বুঝতে পারলাম না... উফ্!
 
গীজারটা হঠাৎই ‘মিস-বিহেভ’ করল... উফ্!
নভেম্বর মাস...ঠান্ডা জলে চান করলে একটু শিরশিরে ভাব জাগে...আলতো উষ্ণ হলে ভালো হয়............হলোনা, উফ্!
 
তৈরি হতে গিয়ে আবার গড়বড়  ...
তাড়াহুড়োয় কিছু একটা গলিয়ে চলে যাব ভেবেছিলাম ......প্রেস করা নেই......... উফ্!
উফ্!
প্রেস করতে আরো এক পশলা দেরি ......... উফ্!
 
অগত্যা কোনো রকমে বাড়ীর বার...যাত্রা বিভ্রাট... সে তো লেগেই আছে । দিন ক্ষণ দেখে আসে না...
 
অটো পেতে দেরি......
দেরি বলে রাস্তায় যানজট...
অফিসে তাই পৌঁছতে দেরি...
দেরিতে পৌঁছে কাজ শেষ করতে দেরি...
কাজ শেষ করতে দেরি দেখে বসের দাঁত খিঁচুনি...
দাঁত খিঁচুনি শুনে মুড অফ্...
মুড অফ্ মানে বাকি  দিনটার বারোটা পাঁচ...
 
উফ্! উফ্! উফ্! উফ্! উফ্! উফ্! উফ্!
 
আর বাড়ী ফিরে...............
 
যাক্ সে কথা নাই বা পারলাম
মোদ্দা কোথায় আসি
 
মশাই,  তাই জন্যই তো শুরুতেই বলেছি ‘উফ্’ এর সঙ্গে ‘দোস্তি’ আমাদের জীবনের, না, জীবনযাপনের (লাইফস্টাইলের) এক বিশাল পাওয়া। এই পাওয়াকে আমরা মেনে নিয়েছি না মেনে নিতে পারছি না, সেটাই  ‘থ্রেডবেয়ার’ (সুতোছেঁড়া???) বিশ্লেষণের বিষয়বস্তু...
 
জানতে ইচ্ছা রইল আপনারা এই ব্যাপারে কী বক্তব্য রাখেন...
 


Saturday, September 12, 2015

উপহার


অতিত পেরিয়ে এলাম
আবার সম্মুখে পেলাম তোমায়
নিজের কাছে লোকাই কী বল?
অর্ধেক রাজত্ত্ব তো তোমারই
আর বাকী যা রইল পড়ে
কিছু আমার – ছাইপাশ
কিছু দেনা-পাওনার বিভ্রাট
ও তুমি নিওনা
 সামলাতে পারবে না
 এই জীবনের হিসেব নিকেষ
আমাকেই চুকোতে হবে সব
যদিও উপহার তোমারই দেওয়া
তবে  এমনি ফিরিয়ে কী করে দিই বল
মানে লাগে যে বড্ড
কেউ বলেনি বিকিয়ে দিতে নিজেকে
কোনও পাঠ্য পুস্তক শেখায় নি এই কথা
তবুও পথে বিছিয়ে দিই আকুলতা
ভুলে? ভ্রমে? আদতে? বিবশতায়?
সে শুধু আমারই মাথা ব্যাথা
তোমার কী ?
তোমায় আমি দেব ফেরত
রং, গান, ছন্দ, আলপনায় আঁকা
আর কিছু  নির্বাক শব্দ অশ্রু মালায় গাঁথা ...
  


Tuesday, August 25, 2015

শেষ দেখা

গুগল থেকে



শেষ মেষ দেখা হ’ল। কোথায় ? প্রশ্নটা অবান্তর। আধুনিক কালে হৃদয় বিনিময়ের পন্থা অজস্র। প্রেম তার পারিভাষিক অর্থ নতুন ভাবে খুঁজে পেয়েছে এ যুগে – এফ বী, টুইটার, ঈ-মেল …। অনেক দিনের আলাপ পরিচয় পিসির পর্দায় । তবুও দেখাটা জরুরী মনে হয়েছিল। তাও হয়ে গেল।

ইলেক্ট্রনিক পর্দার গন্ডি থেকে বেরিয়ে বাহ্যিক জগতের ব্যাপকতায় পিসি স্ক্রীনের চোখ-মন ঝলসানো ব্যাপারটা কেমন যেন মিইয়ে যায়। এবার ও ঘটনা তাই হ’ল… টেবিলের এপার ওপার বসে আগুন্তুক দুজনের কথা বলা দায় হ’ল। এই না কত লাইকস, কমেন্টস, ঈমোটিকন, ইউ টিউব লিঙ্ক এর আদান প্রদান হয়েছিল? সেই সব ‘লাইক-মাইন্ডেডনেস’ কোন ফাঁকে যে খোলা জানালা দিয়ে গলে বেরিয়ে গেল টের পাওয়া ভার হ’ল যে। এখন সান্নিধ্য সুখ  বিরক্তিকর বোধ হতে শুরু হ’ল। ঘন্টার পর ঘন্টা যখন পিসির সামনে বসে চ্যাট চলেছিল তখন কেউ ভেবেছিল সামনা সামনি আধ ঘন্টাও বসে থাকা কষ্টসাধ্য হবে? পুরো দিনের প্ল্যান ছিল। আধ বেলায়ই  মোলাকাত শেষ।

বিদায় নিয়ে ব্যস্ত রাস্তার এপার ওপার করতে গিয়ে একে অন্যকে একবারো ফিরে দেখার প্রয়োজন মনে হ’ল না। তারপর বেশ কিছু দিন কেটে গেছে। এফ-বী তে লাইক, ব্লগে যাতায়াত,  টুইটে রিটুইট বা ফেভারিট  করা প্রায়ই বন্ধ হয়েছে। কিন্তু এখনো মাঝে-মাঝে হেমন্তের সিরসিরে হাওয়ার দিনগুলোতে, মাঝ গরমের আলসে দুপুরে, বসন্তের সেই মন হু-হু করা বিকেলে আর শীতের রাতে যখন লেপ মুড়ি দিয়ে রুম হীটারের তপ্ততায় ও ঘুম আসে না তখন সেই জীবন্ত মুহুর্তগুলোতে  নিজের অজান্তেই হঠাৎ করে মনে পড়ে যায় সেই আধ বেলার ব্যর্থ  স্বপ্নের কথা। শত হলেও মানুষের মন…ভাঙ্গলে জুড়তে সময় লাগে …আহা! হোক না কেন ভার্চুয়াল প্রেম………তাতে কী এসে যায় প্রেম তো প্রেম …। আর মন বলে কথা… ওই সামান্য  আঁচড়টা ভরতে না জানে কত সময় লাগে?

 প্রেম লহমা
তেপান্তরের মাঠ
নিমেষে পার

আবার যুগ
যুগান্তর পেরিয়ে
ও, বন্ধক যে

বোঝা দুষ্কর
তুমি আমি আজ ও
 সেই অছিলা

 সেই প্রসঙ্গে
নিরুত্তর, তবু ও
উদগ্রীব যে

অপেক্ষা রত
আরো কত দিন যে
এমনি মূক

নয় মুখর
কিন্তু সত্যি এই যে
 নেই উত্তর

ভালো লাগার
পালা, ছলনা? রঙ্গ?
এই খেলার

কী পরিভাষা
খেলা ভাঙ্গার খেলা ?
না, মরিচিকা?

কে দেবে বলে
স্রষ্টার উপহাস?
ব্যার্থাভিসার ?

কে বলে দেবে?
নির্বাক, নিরুত্তর
চির কাল সে

রহস্যাবৄতা
নিরব, নির্বোধ যে  
আমি তুষার

 
গুগল থেকে


Saturday, August 08, 2015

অপেক্ষা (The Wait)



(আমার প্রথম বাংলা ফাইভ সেন্টেন্স ফিক্শন  অর্থাৎ পঞ্চবাক্যোপন্যাস  ইংরাজি ভার্সান সহ । যদিও একটি অন্যের সম্পূর্ণ ভাষানুবাদ বলব না কারণ দুটো গল্পের গাঁথুনি এক হতে পারে ভাষা এক নয়, বিচার এক নয় এবং শব্দ  প্রয়োগ ও লব্ধ ও এক নয়; তবুও বলতে পারেন বিভীন্ন ভাষায় একই গল্পের রসাস্বাদন করা খুব কঠীন না হলে ও ভিন্নতা বজায় রাখা অনিবার্য তো নয় আবার নিয়মভঙ্গ ও নয় ...। কী বলেন ?)

                                                                           

 আজ সকালে দ্বিপ্রাহরিক ভোজন রাঁধতে গিয়ে ফিকে ঝিঙের তরকারিতে নুন দিতে ভুলে গেছি। অফিসের মীটিঙে যাওয়ার পথে গাড়ী থেকে নামতে গিয়ে কোলের উপর রাখা পার্সোনাল ডায়েরিটা কখন যে রাস্তায় পড়ে গেছে টের পাইনি আর যখন টের পেলাম তখন আর সেটা খুঁজে পাওয়ার কোনো উপায় ছিল না। অফিস থেকে ফেরৎ আসার পথে একটা টার্নিংয়ে আমার গাড়ীটা প্রায়ঃ আরেকটা গাড়ীর সঙ্গে ঠোকাঠোকি লাগতে লাগতে বাঁচল – অকথ্য গালাগাল, ঝাঁঝালো গলায় রাগারাগি, কুৎসিত ইঙ্গিত কিছু কানে ভেসে আসল কিন্তু আমি আমল দিইনি। মোট কথা সারা দিনটাই খারাপ কাটল – সে তো কাটবেই জানা কথা যখন মন অশান্ত তখন জীবন যাত্রায় তার প্রতিফলন তো হবেই। মন কেন অশান্ত বলাই বাহুল্য – কাল আর পরশুর মতন আজ ও তাঁর  আর কোনো ই-মেল আসেনি যে।


This morning while preparing lunch I forgot to put salt in the as-it-is-insipid-gourd curry – it tasted yuck!!! Later in the day, on my way to an official meeting I lost my personal diary - perhaps I had dropped it unaware on the road when I was getting down from the car and by the time I realized that I had lost it, finding was an impossibility. Returning home I averted a head-on collision, on the nick of time, with another car at a sharp turning followed by a volley of unprintable expletives, angry accusations and sly insinuations from the owner which I pretended to ignore unperturbed. In short, it was a bad day and why not - a heart heavy with remorse could hardly manage to spout positive vibes to mend life which seemed, at present, tattered to shreds. Before retiring to bed, I checked my mail box one more time – no it was not to be; since the past two days he had stopped replying to my innocuous query over mail, “Do you really wish to battle with guilt or break the nest and fly high?”

Friday, August 07, 2015

কাছে দুরে


দেখেছি তোমায় অনেক দিন

বাস স্টপে, রাস্তার ধারে ,

ট্রাম ধরতে গিয়ে,

বাজারের ভীড়ে

ব্যস্ত মানুষ , আমি অকাজের মাঝে

দিন-দুপুরে, ঘুমের আমেজে

রাত ভোর হলে

পাখীর ডাকে খুঁজেছি তোমায়

তুমি শুনেছ কী ?

হয়তো না... বা হয়তো হ্যাঁ..

 

কিন্তু

 

সাড়া দাওনি...কেন বলতো?

অফিসের তাড়া ? না অন্য কিছু ?

ভেবেছি অনেক  

তোমার চোখের তারায়,

জ্বলন্ত চাহনিতে, উত্তপ্ত শ্বাস-প্রশ্বাসের

প্রবাহে ... পায়নি উত্তর

সেই যখন মিনি বাসের গিজগিজে

মানুষের জঙ্গলে দেহের গন্ডিগুলো

ধোঁয়াটে হয়ে যায় এমনি একটা দিনে

বড়ই কাছে পেয়েছিলাম তোমায়

উষ্ণ ধমনির অশ্লীল আচ্ছন্নে

তবু ও কেমন  দুরের স্বপ্ন

মনে হয়েছিল তোমাকে, পাপ বোধ জেগেছিল


বিবেকের তাড়নায় হাত ছাড়িয়ে নিয়েছিলাম


 

বোধহয়,

 

অপাপবিদ্ধা আমি, কিন্তু আমার মোহানুরাগের

দেবতা কেমন ক্লেদাশক্ত  

ঘৄণাকুঞ্চিত ভ্রুকুটি ভ্রমর দংশন

বিষ মাখানো

আমি নির্মল প্রেমের স্রোত খুঁজি

আর সে দেয় আমায় ক্লেদাক্ত কিছু চুম্বন

মুঠোয় করে নিই, আমার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন...

 

তুমি আমার নও

আর কারো কি হও ?

জানিনা...

তবে কাছের মানুষ কী করে

দুরে সরে যায় দেখেছি

তোমায়

বিশাল সমুদ্রের পারাপার...

আমি একক...
 

 

 

Monday, July 20, 2015

কিছু গান কিছু জ্ঞ্যান



গ্রেট মিউজিক গুরুকুল দেখছেন? কালার্স বাংলায় সোম থেকে শনি রাত নটা থেকে দশটা আর রবিবার একই সময় আন্ কাট ভার্সান  । যারা গান ভালোবাসেন ও গায়েকী বোঝেন তারা এই প্রোগ্রামটা একদম মিস করবেন না।


আমি গান ভালোবাসি কিন্তু গান বা গায়েকী সম্বন্ধে লেখার ব্যাপারে অনভিজ্ঞ তো বটেই আবার ইতস্তত ও করি। গান শোনা বা গান বোঝা এক জিনিস আর গান বা গায়েকী সম্বন্ধে লেখাজোখা করা আরেক জিনিস। তার জন্য পেটে অনেক বুদ্ধি থাকা দরকার যা আমার নেই।  

কিন্তু এই প্রোগ্রামটা ভালো লাগার পেছনে অনেক কারণ আছে। একে একে বলি-
১ প্রোগ্রামের ফর্ম্যাট  - অন্য প্রোগ্রামের তুলনায় খুব ভিন্ন না হলেও বেশ আকর্ষক

২ প্রোগ্রাম পরিচালনা - পরিষ্কার , পরিচ্ছন্ন, গোছালো, অত্যধিক ভাবপ্রবনতা বিহীন

৩ বিচারক মন্ডলী -  প্রতিযোগীতা থাকলে বিচার করার লোকের তো প্রয়োজন হবেই

৪ প্রতিভাগীর দল – প্রত্যেকের রেয়াজী গলা ও স্টেজের অভিজ্ঞতার অভাব নেই

৫ কম্পেয়ারিং – মার্জিত ও একই সাথে মজার ও

৬ প্রোগ্রামের মূল মন্ত্র – গান, গান আর আরো ভাল গান

সব মিলিয়ে সপ্তাহের পর সপ্তাহ এক নাগাড়ে দেখলেও এখনো পর্যন্ত বোরিং বলে চ্যানেল ফ্লিক করিনি এটাই প্রোগ্রামের গুনমানের পরিচায়ক। 


 এবার বিষদ আলোচনায় এগোই -

প্রোগ্রামের ফর্ম্যাট অনুযায়ী প্রথমেই একরাশ কিশোর-কিশোরীদের  মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া হল চব্বিশ জন ছেলে-মেয়েকে (দুটি বাচ্চা ও আছে) যারা প্রতিযোগীতায় অংশ গ্রহণ করার উপযুক্ত বলে বিচারকদের মনে ধরলমনে ধরা মানে নিজস্ব পক্ষপাতিত্ব অনুসারে চয়ন নয়। রিতিমত গায়েকীর  কুশলতা পরখ করে বাছা। তারপর তাদের বাজিয়ে দেখা মানে তাদের দিয়ে নানান ভিন্নধর্মী গান গাইয়ে জহুরীর মতন পুঙ্খানুপুঙ্খ রুপে নিখাদ সোনা বাছাই করা। শেষমেষ শুরু হল এলিমিনেশন রাঊন্ড। এই শেষের ব্যাপারটাই সবচেয়ে পীড়াদায়ক যখন আশাহত হয়ে এক-এক করে প্রতিযোগীতা থেকে অংশগ্রাহক বাদ যেতে থাকে। কিন্তু এরই মধ্যে আমরা পাই অনেক সাহসী মনের পরিচয় যারা বাদ গিয়েও হাঁসি মুখে হার স্বীকার ক’রে বাকী যারা আছেন তাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে যায় - এরাই আসল মানের খেলোয়াড়। জীবন যুদ্ধে এরাই সর্বোপরী জয়ী।

চয়নের সময় কম্পেয়ারিংএ ছিল ঈমন ও আরেকটি মিষ্টিমুখ ছেলে যার নাম আমি ঠীক জানিনা। পরের দিকে যখন আসল প্রতিযোগীতা আরম্ভ হল তখন মঞ্চ-উপস্থাপনার ভার পড়ল যার উপর তার নাম সাহেব। আমি সাহেবকে আগে কখন দেখিনি। তবে ছেলেটির  উপস্থাপনা সত্যিই ভালো। আনন্দ, কলহ, ঠাট্টা-তামাশা, ফষ্টি-নষ্টি মিলিয়ে খুবই মজাদার  পারফর্মেন্স – যাকে বলে সলিড এন্টারটেনমেন্ট।

গ্রেট মিউজিক গুরুকুল এর অসলি টী আর পী হচ্ছে এর বিচারকের প্যানেল। এঁরা হলেন –

১ গায়ক শ্রেষ্ঠ এ হরিহরণ

২ সুরের রানি কবিতা কৄষ্ণমুর্তি

৩ বাঙ্গালীর প্রিয় (বাঙ্গালী) বাবু জাভেদ আলী আর

৪ বাংলার গর্ব জীৎ গাঙ্গুলী


হরিহরণ সম্বন্ধে কিছু বলাই ধৄষ্টতা। তিনি একজন লিভিং লেজেন্ড – জীবন্ত কিংবদন্তী। কবিতা কৄষ্ণমূর্তি আমার সর্বতই প্রিয় – সত্যিই সে মেলডি কুইন। জাভেদ আলীর  গায়েকী ও আমার ভীষণ ভালো লাগে এবং বলাই বাহুল্য যে সে বলিউডের এখন প্রথম সারির একজন গায়কজীৎ গাঙ্গুলীকে আমি এই প্রথম দেখলাম ও জানলাম। তাঁর এত গান (হিন্দি ও বাংলা) যে সুপার হিট ও শ্রুতি মধুর আমার অজানা ছিল। আসলে গান গুলো খুবই শোনা কিন্তু তার সুরকার যে উনি এটা জানা ছিল না। সবচেয়ে বড় কথা কালার্স বাংলার মঞ্চে আমরা তাঁকে পেলাম এক সেরা, অমায়িক, দরদী মানুষ হিসেবে তিনি  প্রকৃতপক্ষেই এক ঊঁচু দরের শিল্পী ও সত্যিই বাংলার গর্ব।

এবার আসি প্রতিযোগীদের কাছে। এক কথায় প্রত্যেকে অসাধারণ এক-এক জন খেলোয়াড়। কিন্তু এরই মধ্যে কিছু অসামান্য রতন  আছে যাদের এই মঞ্চ আমাদের কাছে উপহারেরে ন্যায় তুলে ধরেছে

() প্রথমেই বলব শ্রেয়ানের কথা হরিহরণ  ওঁর সম্বন্ধে বলেন, “হী ইজ গডস ওন চাইল্ডউক্তিটা একেবারে খাঁটি। শ্রেয়ান দেব শিশুর মতনই  সুন্দর, সরল, নিষ্পাপ, নির্বিকার চিত্তের মানুষ। এবং তার ও চেয়ে  বড় কথা সে অসম্ভব গুণী । বয়স কতই বা হবে কিন্তু বড়দের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অম্লানবদনে  কঠীন থেকে কঠীনতর গান গাইবার ক্ষমতা সে রাখে। তাঁর গানে এমন একটি ব্যাপার আছে যা বিচারকেরাও  ভাষায় প্রকাশ করতে অপারগ। কোন জায়গায় কতখানি নিক্তির ওজনে মেপে সুর লাগাতে হবে বা স্বর ক্ষেপণ করতে হবে যা ভালো ভালো গাইয়েরা বছরের পর বছর রেওয়াজ করে শেখে তা ছোটো  শ্রেয়াণের কাছে অনায়াসলব্ধ, সহজ ও মনে হয় অতি সাধারণ কথা। এমন দেবতুল্য শিশুর পিতা-মাতা কে বিচারকদের একটাই অনুরোধ,” এঁকে সযত্নে লালন-পালন করবেন এবং আরো ভালো করে গানের তালিম দেওয়াবেন

()  সায়নি দৃষ্টিহীনা কিন্তু এই অভাবটি ঈশ্বর তাঁর কন্ঠে পূর্ণ করে দিয়েছেন। সায়নির গলায় মা সরস্বতি বিদ্যমান। মনে পড়ে যায় কবির কথা – “পাখীরে দিয়েছ স্বর সে গায় গান, তার চেয়ে বেশী করে না সে দান, আমারে দিয়েছ স্বর আমি তারো চেয়ে বেশী করি দান, আমি গাই গান”। সায়নির গলার সুক্ষ কাজগুলি তাঁর গায়েকী কে এক নতুন পর্যায় পৌঁছিয়ে দেয়। তার সুরের আর্তি হৃদয় ছুঁয়ে যায় এবং এক আত্মিক অনুভূতির পরিচয় করায়।

(৩) তমোজীৎ এক কথায় ভার্সাটাইল। একের পর এক সে নানা ধরণের এবং ভিন্ন স্বাদের গান পরিবেশন করেছে। সব গানই সে বিশেষ পটুতার সঙ্গে গেয়েছে। সব চেয়ে বড় কথা আনন্দ হোক বা বেদনা বা হাসি-কৌতুকে ভরা – যেই গানের যা মুড সেই মুডে অক্লেষে ঢুকে পড়ার আর্ট তমোজীৎএর হাতের মুঠোয়। কিশোর হোক বা অরিজীৎ বা শঙ্কর মহাদেবন তমোজীৎ প্রতিটি গায়কের গান নিজের স্টাইলে প্রস্তুত করতে পারদর্শী।

(৪) অরূপ আমাদের কার্ত্তিক ঠাকুর। বাবার ইচ্ছা ছেলে নায়ক হোক। ছেলের ইচ্ছা গায়ক হব। বডি বিল্ডিং এর সাথে চলে গান চর্চা। মাজা গলা, গায়েকী সাবলীল ও বিশিষ্ট। রেওয়াজী ও মনোযোগী – দুয়ের নিখাদ সমাবেশ অরুপ। গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে কমিক সংগ  “ইয়ক চতুর নার” অত্যন্ত নিপূণতার সঙ্গে গেয়ে বিচারকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে অরুপ। হরিহরণের ভবিষ্যৎ বাণী, “অরুপ নেক্সট জেনারেশনের সিঙ্গিং স্টার”।

(৫) ত্রিপুরার বিশ্বজীৎ - কেউ গায় নাভি স্বরে, কেউ গায় কন্ঠ স্বর দিয়ে আর আমাদের বিশ্বজীৎ গায় হৃদয় দিয়ে। কোনো গানের ফর্ম্যাল ট্রেনিং না থাকা সত্ত্বেও বিচারকদের তাক লাগিয়ে বিশ্বজীৎ  সুর লাগায় ত্রুটিহীন ভাবে। প্রোগ্রামের মাঝে একবার আউট হয়ে গিয়েও জন সাধারণের উপচে পড়া অনুরোধে তাকে  আবার ফেরৎ আনাতে হল গ্রেট মিউজিক গুরুকুলের মঞ্চে ওয়াইল্ড কার্ড এন্ট্রীর মাধ্যমে। জাভেদ আলী বলেন সুফিয়ানা গানে বিশ্বজীৎএর কেউ হাত ধরতে পারবে না, অর্থাৎ বিশ্বজীৎ এর সঙ্গে  কেউ মোকাবিলা করতে পারবে না।

(৬) গত সপ্তাহে এক গোছ ওয়াইল্ড কার্ড এন্ট্রীর জন্য (আগেই বলেছি) আবার এক পশলা প্রতিদ্বন্দ হয়ে গেল যার মধ্যে দুজন সেরা কে বিচারকেরা বাছাই করে নিলেন। ঠীক বলেছেন এই সেই প্রতিদ্বন্দ্ব যা আমাদের বিশ্বজীৎ  কে আবার ফিরিয়ে দিল। বাকী দুজনের (আরেকজন গুরপ্রীত) মধ্যে শৈলীর গান মুগ্ধ করল বিচারক ও শ্রোতা  দুই কে। গানের মধ্যে যে শান্তির নিবাস তা শৈলীর গানে পাওয়া যায় - যাকে হিন্দীতে বলে ‘ঠহরাও’ আর বাংলায় স্থৈর্য । আশা করি শান্ত শিষ্ট শৈলী অনেক দূর অবধি যাবে।

গ্রেট মিউজিক গুরুকুলের বিশেষত্ত্ব আমি আগেই বলেছি – এর বিচারক মন্ডলী। এবং গানের অন্য প্রোগ্রামের ফর্ম্যাটের ধারা অবলম্বন করলেও (সিলেকশন/ পারফর্মেন্স/এলিমিনেশন/কম্পীটিশন/উইনিং) এই শো এর এক অনন্য ব্যাপার হল বিচারকেরা নেপথ্যে (অফ স্ক্রীন)  এবং মঞ্চে (অন স্ক্রীন)  গায়ক-গায়ীকাদের নানা ভাবে গুরু হিসেবেও গাইড্ বা দিগদর্শন করেন। আগে বলতে ভুলে গেছি প্রত্যেক বিচারক গুরুর ভূমিকাও পালন করছেন এবং তাঁদের চয়নিত শিষ্য মন্ডলী (অর্থাৎ গায়ক-গায়ীকার দল গুরু-শিষ্য পরম্পরা অনুযায়ী এক এক জন বিচারক অর্থাৎ গুরুর শিষ্য হিসেবে ও মনোনীত)  ছাড়াও অন্য গুরুর শিষ্যদের ও গায়েকীর ভুল-ভ্রান্তি ঠীক করে দেন। এখানেই গান-ভক্তদের (শ্রোতা ও পারফর্মার দুই হিসেবে) অনেক কিছু শেখার আছে যেমন স্বর নিক্ষেপ, মাইকে ভয়েস  থ্রো, ডিকশন, নোটেশন, গানের মুড বা সোল বজায় রেখে গান, গলার হরকতের সঠীক প্রয়োগ, প্রয়োজনীয়তা ও অপ্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি সব বিষয়ে নানা জানা-অজানা তথ্য গুরুজন বিচারকের মুখ থেকে পাওয়া এক বিশাল বড় প্রাপ্তি।  এই প্রসঙ্গে বিশেষভাবে নাম নেব হরিহরণজীর যিনি - বৈজ্ঞানিক ও এস্থেটিক - দুই মেরুর সংযোগে বোঝান ভালো গান গাওয়ার টেকনিক। তাছাড়া আমরা আরো পাই যখন  শ্রদ্ধেয় বিচারকেরা তাঁদের  হিট গান লেখা, কম্পোজিশান, রেকর্ডিং , ইত্যাদির অভিজ্ঞ্যতার স্মৃতিচারণ করেন। সেই গল্পের ছলে বলা কথার মধ্যে অনেক কিছুই আছে শিক্ষণীয়। তাছাড়া এদের গলার গান তো আছেই।

আবার এক-একটি এপিসোডে আমরা পাই নিত্য নতুন গানের জগতের তারক-তারকাদেরও গেস্ট হিসেবে । যেমন একটি এপিসোডে এলেন টলিউডের উঠতি গায়ক অনুপম রায়। আরেক এপিসোডে আমরা পেলাম কলকাতার সবার দিদি – ঊষা উত্থুপকে।

এখন শোটি যে পর্যায় পৌঁছিয়েছে তাতে এলিমেনশনের পর এগারো জন (ওয়াইল্ড কার্ড এন্ট্রী নিয়ে) প্রনিদ্বন্দ্বী এবং তাঁদের মধ্যে টাফ কম্পিটিশন এগারো থেকে এক হওয়ার। যারা এখনো পর্যন্ত এই প্রোগ্রামটাকে অগ্রাহ্য করেছেন তাঁরা ঝটপট শো এর শেষের দিকের মজা লুটতে পারেন। অবশ্য কিছু দিনের মধ্যেই ইউ টিউবে এর শুরু থেকে শেষ সব এপিসোডই আশা করছি দেখতে পাওয়া যাবে।

কালার্সের এই  প্রোগ্রাম মারফৎ প্রতিবেদন গানের জগতে কিছু তরাশ করা হীরে তুলে দেওয়া যারা পাবে নামচিন গায়ক-গায়ীকাদের সঙ্গে এ্যালবাম রেকর্ডিঙের সু্যোগ এবং আরো অনেক আকর্ষণীয়  পুরষ্কার। এটি প্রথম সীসন এবং আগত প্রতি বছর এমন এক-একটি উৎকৄষ্ট সীসন পেশ করার গুরুদায়ীত্ত্ব কালার্স নিজের হাতে তুলে নিয়েছে।

দেখতে ভুলবেন না যেন...   



Friday, May 22, 2015

এবার থুড়ি গতবার পুজোয়







 
(শুরু করেছিলাম “এবার পুজো” দিয়ে কিন্তু  পোস্ট করছি “সেবার পুজো” বলে…। আলসেমি আর কি????)
 
কিছু করিনি বললে ভুল হবে। করেছি কিন্তু মন ছিল না। টেনশন ও ছিল কম না। মাকে নিয়ে পুজো প্যান্ডেলে যাওয়া ...।মার বয়স বিরাষী বছর তাঁর উপর রিসেন্টলি একটা বদ-খদ রোগের স্বীকার হয়েছেন। পুজোর কিছু দিন আগে নিউ রাজিন্দর নগর থেকে হুইল-চেয়ার কিনে আনা হ’ল যাতে দরকার হ’লে মাকে তাতে বসিয়ে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। তবে ভগবানের দয়ায় হুইল-চেয়ারটি একদিন (অষ্টমীর সন্ধ্যাবেলা) ছাড়া আর কোনো দিন ব্যবহার করতে হয়নি। মাকে শুধু এক হাতে লাঠি আর আরেক হাতে শিবার (আমার বোনপোর) কাঁধে ভর দিয়ে প্যান্ডেলে  ঢুকতে দেখে কী যে আনন্দ হয়েছিল বলার নয়। ভাবিনি যে মা আগের মতন নিজের পায়ে হেঁটে গাড়ী থেকে মায়ের পুজো মন্ডপ অবধি আসতে পারবেন।


সবই মায়ের দয়া...


মাকে নিয়ে আশ্বস্ত হলাম বটে কিন্তু প্যান্ডেলের অবস্থা দেখে যাইপরনাস্তি বিচলিত বোধ করলাম। দশ বছর আগে পুজো প্যান্ডেলে ছিল রমরমা অবস্থা   এখন লোক হাতে গোনা যায়। মাসী-কাকীদের ঠাকুরের বেদীতে পুরোহিত মশাইকে পুজোতে সাহায্য করতে দেখা গেল। আর দেখা গেল রিটায়ার্ড জ্যাঠা–কাকাদের পুজোর অন্য সব ব্যাবস্থা সামলাতে। কিন্তু বাচ্চা–পার্টি যে লোপাট। নেই সেই কিশোর-কিশোরীর দল যারা প্যান্ডেল রাঙিয়ে আড্ডা জমাতো। আজকালকার দিনে এম এন সির কাজে ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব – পুজো যায় যাক। আবার পুজো কে দেখে? সন্ধ্যার সময় আরতির সঙ্গে কোমর দুলিয়ে হিন্দি –ফিল্মের স্টাইলে দু-তিনবার নাচলেই তো হল।


তাই হ’ল...


ষষ্ঠির দিন কালি বাড়ী...


অফিস থেকে ফেরার রাস্তায় প’ড়ে। নেবে পড়লাম। আমার বাহন চালক এসব ব্যাপারে ভীষণ উৎসুক ও উৎসাহী । সেও আমার সঙ্গে নেমে মায়ের মূরতি দেখে তারীফ না করে পারল না ।   


সৌভাগ্যক্রমে আমরা  পৌঁছনোর  সাথে-সাথে মন্দিরে আরতি শুরু হল। আর তার সঙ্গে আরম্ভ হল পাঁচ জোড়া ঢাকীর ঢাক বাজীয়ে তালে তাল দিয়ে নৄ্ত্য। এই মনোরম দৄশ্যের ছবি তুলতে ভুলিনি...












সপ্তমির দিন অফিস...


এবার পুজোয় ছুটি নিইনি। মার অসুস্থতার জন্য আগেই অনেক নিয়ে ফেলেছি। অবশ্য অফিস ফেরত প্ল্যান হল সোজা নিবেদিতা কলোনির (পশ্চিম বিহার) পুজারতি দেখার। দিদি, জামাই বাবু আর শিবা মাকে নিয়ে এল বাড়ী থেকে। কিন্তু এ কি? প্যান্ডেল যে প্রায় ফাঁকা। আগে পুজোয় প্যান্ডেলেই প্রায় সারা দিন কাটত। এখন সেই কমিউনিটি গ্যাদারিং এর মাহাত্য কমে গেছে। আমার এক বরিষ্ঠ সহকর্মী গত বছর তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বললেন, “পুজোয় এখন আর কে ছুটি নেয়? যা দেখার সব তো রাত্রে। দিনে অফিস করুন না।”


তবে সপ্তমির রাতে মাকে হেঁটে প্যান্ডেলে ঢুকতে দেখে মন আনন্দে ভরে গেল। ভাবিনি মাকে আবার সুস্থ অবস্থায় চলে ফিরে বেড়াতে দেখতে পাব। এবার পুজোয় এটাই সব চেয়ে বড় পাওয়া।


অবশ্যি পুজোর আমেজ আর আগের মতন নেই। গ্লোবলাইজেশনের যুগে মানুষ যেমন চিন্তা ধারার সীমিত গন্ডি অতিক্রম করে এক বিশ্ব ব্যাপক পরিধির মধ্যে নিজেকে দেখতে শিখেছে তেমনি আবার নিজের প্রান্তের সাংসকৄতিক বৈশিষ্টগুলিকে, ভুলতে বসেছে বললে ঠীক বলা হবে না, বরং বলব হয় এড়িয়ে চলতে শিখে গেছে নয় তার সঠিক মুল্যাংকন করতে অক্ষম হয়েছে। ব্যাপকতা মানব জাতিকে উদারচেতা হতে সাহায্য করে। তার বিচার ধারা ও দৃষ্টিকোণকে আরো বড় পরিমাপ ও পরিধি দেয়। কিন্তু তার মানে কি এই যে আমরা নিজেদের প্রান্তিক বৈচিত্র্য ও  বিশিষ্টতাগুলিকে বিসর্জন দেব? আমাদের সংস্কৃতি আমাদের গড়ে ওঠা ও বড় হওয়ার বিরাট মহত্ত্বপূর্ণ এক  অঙ্গ সেটা ভুলে গেলে বা সেটাকে বাদ দিলে কী করে চলবে? আরেকটা কথা যেটা প্রায়শই আমরা অগ্রাহ্য করে যাই সেটা হল আমাদের উত্তরসূরির প্রতি আমাদের দায় দায়িত্ত্ব। তাদের জন্য আমরা কী রেখে গেলাম?  আমার এ যুগের বন্ধু বান্ধবরা সময়াভাব, সামাজিক ও আর্থনৈতিক পরিবর্তন ও তারই সঙ্গে নিজস্ব রুচির বিবর্তনের দোহাই দেন। আমি সম্পূর্ণভাবে তাঁদের সঙ্গে এক মত হতে পারছি না।


মানলাম সময় পালটে গেছে এবং তার সঙ্গে অর্থোপার্জনের জটিলতা, জীবন নির্বাহের দায়বদ্ধতা এবং নানান প্রেশার, স্ট্রেস ইত্যাদি কিন্তু তাই বলে আমাদের প্রদেশের এত বড় একটা ঐতিহ্য এমন ভাবে নষ্ট হয়ে যাবে? ভাবতেও খারাপ লাগে।


অষ্টমীর দিন পুষ্পাঞ্জলী


মাস্ট। এবার ও  বাদ পড়ল না। তবে মা কে একটু বিষন্ন লাগল। ভক্তের দলের  এ্যটেন্ডেন্স যে এত কম হবে মা বোধহয় এতোটা আশা করেন নি। আমরা কী তাহলে ব্যাপক নাস্তিকতার দিকে অগ্রসর হচ্ছি? এটাই কী বস্তুবাদের চরম মাশুল? আবার প্রশ্ন ওঠে মনে – মূর্তি পুজা বা রিচুয়ালিজম না মানাই কী নাস্তিকতার লক্ষণ? আস্তিকতার একটা বৄহত্তর পরিভাষা কে অগ্রাহ্য করাটা ও সঙ্কীর্ণমনতা নয় কী?


তবে সন্ধ্যারতির সময় আবার ফিরে পেলাম সাবেকী রমরমা ... ধুনুচি নৄত্য, হৈ-হট্টগোল, আমোদ, হাঁসি-তামাশা আর সদল বলে আরতি দেখার ধুম!!! যাক এখন ও


আশা আছে...।


নবমী ও দশমীর  দিন বাড়ীতেই কাটল


পাঠকেরা বলবেন, অ্যাঁ! একি হল?” এতো সমীক্ষা, পর্যালোচনা ও নিন্দেবাদের পরে এই? হ্যাঁ, তাই। অনেক ঘুরে শেষে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। তাই নবমী ও দশমী দুইই বাদ পড়ল মাতৄ-দর্শণ। হয়তো আমারই মতন গোটা চাকুরীজীবীর দল ২৪x৭ জীবন নির্বাহ ও অর্থোপার্জনের তাগীদে ছুটে-ছুটে এতোই শ্রান্ত যে সামাজিক মেলামেশার দায়দায়িত্বর চেয়ে ছুটির দিনে গা এলিয়ে ঘরে পড়ে থাকাকেই প্রাধাণ্য দেয় আর মাকে মনে-মনে স্মরণ করে বলে, “ পাপ নিও না, মা। কর্তার ইচ্ছায়ই কর্ম। এও বুঝি তোমারই ইচ্ছা”।